http://themonthlymuktidooth.blogspot.com

Monday, September 12, 2011

দায়িত্ব অম্বিকা ও জয়রামকে, মমতার মন পেতে তৎপর মনমোহন জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি






দায়িত্ব অম্বিকা ও জয়রামকে, মমতার মন পেতে তৎপর মনমোহন জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি
তিস্তা চুক্তির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক স্তরে যোগাযোগ রাখতে উদ্যোগী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ তথা কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।
১৬ তারিখ সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের (এসআরএফটিআই) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতা যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অম্বিকা সোনি। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, সেই সুযোগে মমতার সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলতে। সে দিন বেলা সাড়ে বারোটায় মমতার সঙ্গে অম্বিকার বৈঠক হওয়ার কথা। এমন নয় যে, তিস্তা চুক্তির খুঁটিনাটি নিয়ে মমতা-অম্বিকা আলোচনা হবে। তবে রাজ্যের সব আপত্তি দূর করেই যে কেন্দ্র বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করবে, প্রধানমন্ত্রীর তরফে সেই বার্তাই মমতার কাছে পৌঁছে দেবেন অম্বিকা। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা হল, ইউপিএ-র অন্যতম বড় শরিক হিসেবে তৃণমূলের সঙ্গে দৈনন্দিন রাজনৈতিক সম্পর্ক যে গড়ে তোলা প্রয়োজন, সেটা ঘা খেয়ে এখন বুঝতে পারছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
মমতার সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগের অভাবের দিকে ইঙ্গিত করে অনেক কংগ্রেস নেতাই বলছেন, এই যোগাযোগটা থাকলে গত কাল জাতীয় সংহতি পরিষদের বৈঠকে সরকারকে বিব্রত হতে হত না। ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিল’ নিয়ে এনডিএ-শাসিত রাজ্যগুলির আপত্তির থেকে স্বাভাবিক ভাবেই অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধিতা। ওই কংগ্রেস নেতাদের মতে, সরকারের উচিত ছিল, আগে থেকেই মমতার সঙ্গে আলোচনা করা। আপত্তির দিকগুলি নিয়ে তাঁকে বোঝানো। তাঁকে বৈঠকে নিয়ে আসার ব্যাপারে সক্রিয় হওয়া। তা হলে সরকারের মুখ পুড়ত না।
প্রথম ইউপিএ জমানায় কিন্তু সমর্থক বামেদের সঙ্গে এই রাজনৈতিক যোগসূত্র রক্ষা করে চলত কংগ্রেস। যোগাযোগ রাখতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের গোড়ার দিকেও মমতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন প্রণববাবুই। তখন মমতা রেলমন্ত্রী। ফলে দিল্লিতে বসে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা প্রণববাবুর পক্ষে সহজ ছিল। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে রাজ্যে চলে যাওয়ার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সেই যোগসূত্র ক্ষীণ হয়ে এসেছে দিল্লিতে প্রণববাবুর ব্যস্ততার কারণে।

তা ছাড়া, রাজ্যের জন্য কেন্দ্রীয় আর্থিক প্যাকেজের প্রশ্নে মমতার সঙ্গে প্রণববাবুর একটা সূক্ষ্ম মনোমালিন্যও তৈরি হয়েছে। মমতার ধারণা, বাম শাসনে দেউলিয়া রাজ্যকে ফের নিজের পায়ে দাঁড় করানোর জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়ার বিষয়ে প্রণববাবু ততটা আন্তরিক নন। এ নিয়ে খোদ মনমোহনের কাছে দরবার করেছিলেন মমতা। তার পরেও প্রণববাবুর দেওয়া আর্থিক প্যাকেজে অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক স্থগিত রেখে কলকাতা চলে আসতে নির্দেশ দেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে একটা রফা হয়েছে। এবং ‘নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল’ বলে তা মেনে নিয়েছেন মমতা। কিন্তু প্রণব-মমতা সম্পর্কে একটা চিড় থেকেই গিয়েছে। এই অবস্থায় মমতার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবেন কে?
টু-জি কেলেঙ্কারি থেকে অণ্ণা হজারে একের পর এক বিষয়ে মনমোহন সরকার এখন জেরবার। ফলে শরিকদের পাশে পাওয়া এখন তাদের অনেক বেশি করে দরকার। কিন্তু ডিএমকে-কে নিয়ে কংগ্রেসের একটা উদ্বেগ রয়েছে। টু-জি মামলা যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে অনেকেরই ধারণা, এ রাজা বা কানিমোঝির বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ করা কঠিন। এই দু’জনের গ্রেফতারি নিয়ে ডিএমকে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তাঁরা যদি জেল থেকে ছাড়া পান, তা হলে ডিএমকে কেন্দ্রের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিতে পারে বলেও জল্পনা রয়েছে। চিদম্বরমকে নিয়েও কংগ্রেস উদ্বিগ্ন। গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁর জয়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছে। সেই মামলার ফল কী হবে, সেটাই চিন্তার কারণ।
তামিলনাড়ু নিয়ে এই মাথাব্যথার সময়ে পশ্চিমবঙ্গকে চটিয়ে আরও জলঘোলা করতে চান না মনমোহন। তাই মমতার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার কাজে প্রাথমিক ভাবে অম্বিকা সোনি এবং জয়রাম রমেশের নাম ভেবেছেন তিনি। অম্বিকার সঙ্গে মমতার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। মমতা রেলমন্ত্রী থাকার সময় তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতেন অম্বিকা। তা ছাড়া, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হিসেবে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার মুখপাত্র। অন্য দিকে জয়রাম রমেশ অতি সম্প্রতি মমতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিতর্কিত জমি বিলের ব্যাপারে তাঁর সম্মতি আদায় করেছেন। দু’-দু’বার কলকাতা গিয়ে মমতার সঙ্গে বৈঠক করেন জয়রাম। মমতার আপত্তির জায়গাগুলি জেনে নিয়ে সেগুলির নিষ্পত্তি করেন। সেই দৌত্যের শেষে জমি বিল নিয়ে তিনি যে খুশি, তা প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জমি বিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতে পাশও হয়ে গিয়েছে। স্পষ্টতই, তিস্তা চুক্তি নিয়ে যা করতে পারেননি কূটনীতিক শিবশঙ্কর মেনন, জমি বিল নিয়ে তা-ই করে দেখিয়েছেন রাজনীতিক জয়রাম।
ফলে ডিএমকে-প্রধান করুণানিধির সঙ্গে যেমন প্রণববাবু যোগাযোগ রেখে চলেন, তেমনই মমতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতে পারেন অম্বিকা-জয়রাম। তবে ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা সম্ভব না হলেও মমতার সঙ্গে সম্প্রতি তৈরি হওয়া জটিলতা দূর করতে চান প্রণববাবু। মমতাও এ ব্যাপারে আগ্রহী। প্রণববাবু কলকাতা গেলে দু’জনের মধ্যে কথা হবে। আগামী মহালয়ার দিন গ্রামীণ মহিলা ব্যাঙ্কের একটি অনুষ্ঠানে মমতা ও প্রণববাবুর উপস্থিত থাকার কথা ছিল। থাকার কথা ছিল জয়রাম রমেশের। কিন্তু রাজ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি চালু থাকায় আপাতত সেই অনুষ্ঠান স্থগিত রাখা হয়েছে। ফলে প্রণব-মমতা বৈঠক হতে দেরি হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

No comments: