http://themonthlymuktidooth.blogspot.com

Monday, September 19, 2011

সরকার জাতির বিবেককেও বিভক্ত করেছে - ফখরুল


সরকার জাতির বিবেককেও বিভক্ত করেছে - ফখরুল : ভূমিকম্পে জনগণের আতঙ্কের সুযোগে তেলের দাম বাড়াল সরকার - মাহমুদুর রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখনই ব্রুট মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় আসে তখনই মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনে যে কোনো ধরনের প্রতিবাদ ঠেকাতে তারা সফলতার সঙ্গে সব শ্রেণীপেশার মানুষকে বিভক্ত করে ফেলেছে। জাতির বিবেক সাংবাদিকদেরও বিভক্ত করে প্রতিবাদের পথকে রুদ্ধ করা হয়েছে। এ জন্যই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাতেও রাজনৈতিক দল খোঁজা হচ্ছে।
গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বাংলাদেশে মানবাধিকার আইন তৈরির দাবি নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান রাইট’স অ্যান্ড সার্ভিস এ আলোচনার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা সত্তর দশকের চিলির মতো। অসংখ্য গুম-হত্যা চলছে। এর দায়ে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও তার লুটেরা সহযোগীদের একদিন চিলির পিনোচেটের মতো বিচার হবে। তিনি বলেন, সরকার লুটপাট করার টাকা জনগণের ঘাড়ের ওপর দিয়ে নিচ্ছে। দেশের জনগণের ভূমিকম্প আতঙ্কের সুযোগে সরকার তেল-গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এটা একটি গণবিরোধী সরকার। তাই গণআন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান রাইট’স অ্যান্ড সার্ভিসের সভাপতি ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীমের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার। সভা পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার ফজলুল করিম মণ্ডল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে বাংলাদেশে মানবাধিকার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখন আমাদের জেগে উঠতে হবে। এই সরকারকে বলে দিতে হবে বিদায় হও। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাও। জনগণের মানবাধিকার ফিরিয়ে দাও। আর কোনো গুম-হত্যা আমরা দেখতে চাই না।
তিনি বলেন, মানবাধিকার মূলত দুই রকমের। একটি হচ্ছে জনগোষ্ঠীর অধিকার অপরটি ব্যক্তির অধিকার। একজন ব্যক্তির অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এই তিনটি মৌলিক অধিকারকে নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দেখি এ সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এই মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারছে না। ‘ডাস্টবিন থেকে একজন বৃদ্ধা খাবার তুলে খাচ্ছেন’ একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত এমন একটি ছবির বিবরণ তুলে ধরে মির্জা আলমগীর বলেন, এই ছবি দেখে ১৯৭৩-৭৪ সালের কথা মনে পড়েছে। তখন এক টুকরো রুটির জন্য মানুষ ও কুকুর ডাস্টবিনে যুদ্ধ করেছে। রাস্তায় এখানে সেখানে মানুষের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যেত। তখন দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গেছে। এখন যে সরকার আছে তখনও সেই সরকার ছিল। অমর্ত্য সেন তার বইয়ে লিখেছিলেন খাদ্য সমস্যার কারণে দুর্ভিক্ষ হয়নি। তখনকার সরকারের অব্যবস্থার কারণেই দুর্ভিক্ষ হয়েছিল।
তিনি বলেন, ৭২-৭৫ সালে এই দেশে শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, মনুষ্য জাতিকে কীভাবে অবমাননা করা হয়েছে তা এই তরুণ প্রজন্ম জানে না। কয়েকদিন আগে অনেকগুলো মানবাধিকার সংস্থা তথ্য দিয়েছে - বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হিউম্যান রাইট’স ওয়াচ বলেছে, ক্রসফায়ার বন্ধ না হলে র্যাবকে অস্ত্র দেয়া বন্ধ রাখতে হবে। আমেরিকা স্টেট ডিপার্টমেন্টের হিউম্যান রাইট’স রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার খুবই বিপজ্জনক। বিচার বিভাগে গিয়ে সাধারণ মানুষ ন্যায় বিচার পাচ্ছে না। এরপর আর কি বাকি থাকতে পারে? আমরা এখন একটা অন্ধকার যুগের দিকে ফিরে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের অন্ধকার কুঠুরিতে ফেলে দেবেন না।
মির্জা আলমগীর বলেন, বাংলাদেশকে একটা পুলিশি এস্টেটে পরিণত করা হয়েছে। তারা যাকে খুশি যখন খুশি তুলে নিয়ে যায়। আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। শীর্ষ কাগজের সম্পাদককে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা কি জানি পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে একজন সম্পাদককে এভাবে নির্যাতন করা যেতে পারে? এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় যাতে বড় কোনো প্রতিবাদ না হয় সেটাও নিশ্চিত করতে সরকার সফল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনজীবী, চিকিত্সক, শিক্ষক সব পেশার মানুষকে সরকার বিভক্ত করে ফেলেছে। এমনকি জাতির বিবেক সাংবাদিকদেরও সরকার বিভক্ত করে প্রতিবাদের কেন্দ্রস্থলকে দুর্বল করতে সফল হয়েছে।
বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, রুয়ান্ডা, সিয়েরালিওনসহ ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলোতে প্রথমদিকে যেসব চিত্র দেখা গিয়েছে, তা বাংলাদেশে এখন লক্ষ্যণীয়। কিছু মানুষ এখন আইনের ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। যত অপরাধ করুক, আইন তাদের ছুঁতে পারছে না। নানা কৌশলে জনগণকে এসব সহ্য করতে বাধ্য করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশপ্রেমিক হলে এসব প্রতিরোধ করতে হবে। প্রতিরোধের সময় এসে গেছে। এখন প্রতিরোধ না করলে আমরা সত্যিই একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের নাগরিকে পরিণত হব বলে তিনি দেশবাসীকে সতর্ক করে দেন। আইনজীবী এমইউ আহমেদ, ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমসহ কয়েকটি হত্যা-গুমের উদাহরণ টেনে দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উত্তরোত্তর খারাপের দিকে যাচ্ছে। কেউ নিরাপদ নই। বাসা থেকে বেরিয়ে যারা ফিরে আসেনি, তাদের ছেলে-মেয়ে, স্ত্রীর পরিস্থিতিতে নিজেদের একটু চিন্তা করে দেখতে দেশবাসীর প্রতি তিনি আহ্বান জানান। গুম-হত্যাকে ক্রসফায়ারের চেয়েও জঘন্য মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চিলিতে পিনোচেটের শাসনে হাজার হাজার মানুষ গুম-খুন হয়েছে। আর বাংলাদেশে এখন শ’ শ’ গুম-খুন হচ্ছে। এ সরকার মানবাধিকারে বিশ্বাসই করে না।
শেয়ারবাজারে লুট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আট শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরিচ্যুতি, নিত্যপণ্য ও তেল-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে চলেছে এ সরকার। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। জনগণের ভূমিকম্প আতঙ্কের সুযোগে এক লাফে তেলের দাম ৫ থেকে ৮ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফার্নেস অয়েলের দাম জোট আমলের চেয়ে শতগুণ বাড়ান হয়েছে। ৪ থেকে ৬ টাকায় যে বিদ্যুত্ উত্পাদন করা যায় তা ১৮ টাকায় কিনে সরকার জনগণের টাকা লুট করছে। এ জন্যই তেলের দাম আবার বাড়ান হয়েছে। এই বর্ধিত টাকা সরকারি লুটেরাদের পকেটে যাবে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, খুন, রাজনৈতিক হত্যা, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু এখন নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যে রাষ্ট্রে পুলিশি নির্যাতনে হাইকোর্টের আইনজীবীর মৃত্যু হয়, সে রাষ্ট্রে কেউ-ই নিরাপদ নয়। পুরো জনগণ মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে আতঙ্কে বাস করছে। জনগণের অধিকার রক্ষার সব প্রতিষ্ঠানকে সরকার ধ্বংস করে ফেলেছে। যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ জানাতে তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

No comments: