http://themonthlymuktidooth.blogspot.com

Thursday, September 22, 2011

Strike in Bangladesh for reduce rates of Fuel, Gas, and Essential items for the Peoples...পিকেটিং ছাড়াই সফল হরতাল : বোমা ফোটেনি গাড়ি জ্বলেনি


রাজপথে পুলিশ ও সরকারি দলের ব্যাপক মহড়া, গ্রেফতার-নির্যাতন, বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয় অবরুদ্ধ রাখা এবং হরতাল আহ্বানকারীদের ঝটিকা মিছিলের মধ্য দিয়ে গতকাল দেশব্যাপী পালিত হলো ১১ ঘণ্টার হরতাল। কোনো পিকেটিং ছাড়াই দেশব্যাপী স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। এবারের হরতালে বোমা বিস্ফোরণ ও যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেনি। ঢাকার ফাঁকা রাস্তায় পুলিশি প্রহরায় মিছিল করে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে হরতাল সমর্থকরা মিছিল বের করলেই তাতে হামলা চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। অলিগলি ও বাসাবাড়িতে খুঁজে খুঁজে গ্রেফতার করা হয় হরতাল সমর্থকদের। সারাদেশে পাঁচ শতাধিক বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ ও সরকারি দলের হামলায় চার শতাধিক হরতাল সমর্থক আহত হন। রাস্তায় আদালত বসিয়ে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে দণ্ড দেয়া হয়। সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের হামলায় বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপি নেতা গৌরনদী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফরিদ উদ্দিন জমাদ্দারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যশোরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলায় পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম গুরুতর আহত হয়েছেন। যশোর পৌর মেয়রের ওপর হামলার প্রতিবাদে জেলা বিএনপি শনিবার যশোর জেলায় অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করেছে।
গতকালের হরতালে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। রাজধানীর শপিংমল, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বন্ধ। সদরঘাট থেকে ছোট ছোট কিছু লঞ্চ ছাড়লেও তাতে যাত্রীসংখ্যা ছিল কম।
রাজধানীতে হাতেগোনা কিছু বিআরটিসি বাস চলতে দেখা গেছে। সরকারি অফিস খোলা থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, যশোরসহ বেশকিছু স্থানে হরতালের সমর্থনে বের হওয়া মিছিলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা হামলা চালায়।
এদিকে হরতাল ঠেকাতে পুলিশ ও র্যাবের জঙ্গি টহলের পাশাপাশি সরকারি দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এ সরকারের আমলে হরতালে রাজধানীতে সরকারি দলের সবচেয়ে বড় শোডাউন হয়েছে গতকাল। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে লাঠি হাতে ‘শান্তি মিছিল’ বের করে।
প্রসঙ্গত, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জামায়াতসহ চারদলীয় জোট ও সমমনা দলগুলো গতকাল দেশব্যাপী ১১ ঘণ্টার হরতাল পালন করে। চারদলীয় জোটের শরিক বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিস এবং সমমনা বাংলাদেশ লিবারেল পার্টি (এলডিপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম বাংলাদেশ, ন্যাপ ভাসানী যুগপত্ভাবে এ হরতাল পালন করে।
গতকাল বিকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে হরতাল সফল করায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, হরতালে পুলিশ-র্যাব ও আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী দেশব্যাপী বিরোধী দলের ওপর হামলা-গ্রেফতার চালিয়েছে। সরকার দেশকে পুরোপুরি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের দণ্ড দেয়া হয়েছে। সরকারের এহেন অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদ ও গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবিতে আগামীকাল দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপি। মির্জা আলমগীর বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, গণমানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ে হরতালের ন্যায় কর্মসূচি পালনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিএনপির হরতাল সমর্থন করেছে।
অবরুদ্ধ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় : হরতালের পুরো সময় পুলিশ ও র্যাব অবরুদ্ধ করে রাখে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়। দুই স্তরের পুলিশি ব্যারিকেডে দলের নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে ঢুকতে ও বের হতে বাধার সম্মুখীন হন। শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে হাতেগোনা ক’জন নেতাকর্মী কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করায় ৩ বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে চাইলে অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ ও অ্যাডভোকেট জুলফিকার হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। দলীয় কার্যালয়ের আশপাশে অনেক নেতাকর্মীকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। পুলিশি বেষ্টনী ভেদ করে কার্যালয়ে প্রবেশের সুযোগ খুঁজতে দেখা গেছে শতাধিক নেতাকর্মীকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে
অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী কার্যালয়ে অবস্থান করেন। মির্জা ফখরুল সকাল ৮টার দিকে দলীয় কার্যালয়ে আসেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও সকালেই দলীয় কার্যালয়ে এসে অবস্থান নেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে দলীয় কার্যালয়ে আসেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীসহ অনেকে।
সংসদ ভবনে এমপিদের মিছিলে পুলিশি বাধা : হরতালের সমর্থনে গতকাল জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণে বিরোধীদলীয় ২০ জন সংসদ সদস্য মিছিল বের করলে দু’শতাধিক পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সদস্য তাদের তিন দফায় বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংসদ সদস্যদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলে।
সকাল ৮টা থেকে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার পূর্ব টানেলে অবস্থান নেন। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের নেতৃত্বে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মো. বরকত উল্লাহ বুলু, মোজাহার আলী প্রধান, গোলাম মোস্তফা, এম মোস্তফা আলী মুকুল, মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, শেখ সুজাত মিয়া, লায়ন হারুনুর রশিদ, জয়নুল আবদিন ফারুক, নাজিমউদ্দিন আহমেদ, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আশরাফ উদ্দিন নিজান, মোস্তফা কামাল পাশা, শাম্মী আক্তার, নিলুফার চৌধুরী মণি, রেহানা আক্তার রানু, সৈয়দা আফিয়া আশরাফি পাপিয়াসহ ২০ জন সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে একটি মিছিল বের করে দক্ষিণ দিকের রাস্তায় যাওয়া শুরু করলে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। পরে সেখানে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় সংসদ সদস্যরা সংসদ এলাকায় পুলিশ কেন ঢুকেছে, তার কারণ জানতে চাইলে কোনো জবাব দিতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তারা। পাশাপাশি পুলিশি ঘেরাওয়ের মাঝে তারা সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেন। পরে তারা দিক পরিবর্তন করে মিছিল শুরু করলে আবারও বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের কর্মকর্তাদের নির্দেশে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের ঘিরে ফেলা হয়। সেখানে রাস্তায় বসে এর প্রতিবাদ জানান তারা।
তাত্ক্ষণিক সমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না। তারা দুঃশাসন ও অপশাসনকে পছন্দ করে। বিএনপি সরকারের রেখে আসা ১৭ টাকার চাল বর্তমানে ৪০ টাকা, ৪৮ টাকার সয়াবিন তেল ১২০-১৩০ টাকা। এভাবে প্রতিটি পণ্যের দাম দু’তিনগুণ বেড়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা জঘন্য মিথ্যাচার করে বলছেন জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। এ অবস্থায় সরকার দফায় দফায় তেল ও গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেনতেনভাবে আবারও ক্ষমতায় যেতে চায়। তাই তারা ভারতকে সবকিছু উজাড় করে দিচ্ছে। কিন্তু দাতাদের খুশি করে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। এজন্য জনগণের সমর্থন লাগবে। পুলিশ সদস্যদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থের পক্ষে দাঁড়ান, অন্যথায় আপনাদের জনগণের আদালতে দাঁড়াতে হবে।
হরতালের পক্ষে এই প্রথম ঢাবিতে ছাত্রদলের মিছিল : দেশের বিভিন্নস্থানে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদল। কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ হরতাল সমর্থকদের বাধা এবং তাদের ওপর হামলা ও লাঠিচার্জ করেছে। আটক করেছে অর্ধশতাধিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সরকারের সময়ে আহূত হরতালে গতকালই প্রথম মিছিল করে ছাত্রদল।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কাবস্থা এবং ছাত্রলীগের পাহারা উপেক্ষা করে ভোর পৌনে সাতটায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের সামনে থেকে ‘হরতাল, হরতাল’ স্লোগানে মিছিল বের হয়। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজের নেতৃত্বে ৩৫/৪০ জন নেতাকর্মীর মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সড়ক হয়ে মেডিকেল কলেজের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে সকাল নয়টার দিকে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসের পাশেই জিয়া শিশুপার্কের সামনে থেকে আরেকটি মিছিল বের করে ছাত্রদল। মিছিল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে তা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মিছিল থেকে ছাত্রদল কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নগরীর শাহবাগ ও শিশুপার্ক এলাকায় সকাল নয়টায় বিক্ষোভ করে। এসময় পুলিশ মারমুখী লাঠিচার্জ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে বিক্ষোভে কেন্দ্রীয় নেতা বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, আবু বকর ছিদ্দিক, যুগ্ম সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, শহিদুল্লাহ ইমরান, ঢাবি আহ্বায়ক আবদুল মতিন, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক ওবায়দুল হক নাসিরসহ শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
পুলিশের নির্যাতনে ছাত্রদল নেতা শহিদুল ইসলাম বাবুল, যু্গ্ম-সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, শহিদুল্লাহ ইমরান, ঢাবি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হক নাসির, মহিদুল হাসান হিরুসহ প্রায় ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
এদিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, বরিশাল, কুমিল্লা, পিরোজপুর, খাগড়াছড়ি, মাগুরা, রাঙামাটি, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, খুলনা, শেরপুর, মানিকগঞ্জ ও বরগুনার আমতলীতে হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদল। এসব কর্মসূচি চলাকালে সংগঠনটির ৫৭ নেতাকর্মীকে আটক করা হয় বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়েছে। কোনো বিভাগে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। পরিবহন চলেনি, ক্যাম্পাস ছিল ফাঁকা। কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা চালালেও তার পাল্টা জবাবে দু’টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করেছে। অন্যদিকে হরতালের বিপক্ষে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ। প্রতিপক্ষের কর্মসূচি প্রতিহত করতে ক্যাম্পাসে পালাক্রমে মহড়া ও পাহারা বসায় সংগঠনটি।
সকাল নয়টায় ওই দু’টি বিভাগের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরেজমিনে পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখা যায়, কোনো শিক্ষার্থীই হলে উপস্থিত হননি। একমাত্র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও একজন শিক্ষক হলে বসে আছেন পরীক্ষা নেয়ার জন্য। ওই শিক্ষকও অবশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা বাধ্য করছেন আমাদেরকে। পরীক্ষা স্থগিতের ব্যাপারে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, শিক্ষার্থীরা উপস্থিত না হওয়ায় দর্শন ও নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে এসব পরীক্ষা নেয়া হবে।
মহাখালীতে সারাদিন অবরুদ্ধ কেন্দ্রীয় নেতারা : মহাখালী এলাকায় বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশি বাধার কারণে তা পণ্ড হয়ে যায়। এমনকি তাদের একসঙ্গে জড়ো হতেও দেয়নি। পক্ষান্তরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের পুলিশি পাহারায় হরতালবিরোধী মিছিল ও মোটরসাইকেল মহড়া দিতে দেখা গেছে। এদিকে হরতালে মহাখালী, গুলশান, বনানীসহ আশপাশের অভিজাত এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ ছিল। রাস্তায় বিআরটিসিসহ কিছুসংখ্যক গাড়ি, টেম্পো ও লেগুনা চলতে দেখা গেছে। গতকাল সকালে হরতালের সমর্থনে মহাখালী এলাকায় বিএনপির সহ-সভাপতি সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে তা পণ্ড হয়ে যায়। সকাল ১১টার দিকে পুলিশ সদস্যরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালালে সেলিমা রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য সুলতানা আহমেদ, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা, প্রচার সম্পাদক আয়েশা সিদ্দিকা মনিসহ কয়েকজন নারী নেতাকর্মী প্রথমে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথে পরে একটি মোবাইল কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে আশ্রয় নেন। সেখানে গুলশান থানার এসআই শেখ সোহেল রানাসহ বেশ কিছু নারী পুলিশ ওই টাওয়ার ঘেরাও করে রাখে। ওই সময় শেখ সোহেল রানা সাংবাদিকদের বলেন, তারা বের হলেই গ্রেফতার করা হবে। পরে সারাদিন অবরুদ্ধ থাকার পর বিকাল ৬টার দিকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
ঢাকা মহানগরী : ঢাকা মহানগরের বিভিন্নস্থানে হরতাল সমর্থক বিভিন্ন ইউনিটের বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও পিকেটিং করেছে। এসব কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও হামলা করেছে। আটক করেছে অনেক নেতাকর্মীকে।
তেজগাঁও থানা বিএনপি কারওয়ান বাজার এলাকায় মিছিল বের করে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে তারা মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। নগরীর পল্লবী থানা বিএনপি মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার গোলচত্বরে মিছিল করেছে। এতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করে। খিলগাঁও থানা বিএনপি গোড়ান টেম্পোস্ট্যান্ড থেকে মিছিল বের করে। এতে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে বেশ ক’জন আহত হয়। সূত্রাপুর থানা বিএনপি টিপু সুলতান রোডে মিছিল বের করলে তাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। আদাবর বিএনপি শেখেরটেকে মিছিল বের করলে পুলিশের বাধায় তা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বাড্ডা থানা বিএনপি উত্তর বাড্ডা থেকে মিছিল বের করলে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। শেরেবাংলানগর থানা বিএনপি মিছিল বের করলে পুলিশের বাধায় তা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
সকালে খিলগাঁও এবং শাহজাহানপুর এলাকায় মিছিল বের করে খিলগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি ইউনুছ মৃধা, তাঁতী দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইউসুফ বিন জলিল কালু, খিলগাঁও থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফারুক-উল ইসলাম, যুবদলের সভাপতি জামিলুর রহমান নয়ন, বিএনপি নেতা হাজী মোয়াজ্জেম হোসেন খান, পনু হাজী, হুমায়ুন কবির, নজরুল ইসলাম প্রমুখ। মিছিলটি র্যাব ও পুলিশ ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এদিকে সকাল ৭টা হতে মির্জা আব্বাসের বাড়ি শতাধিক পুলিশ ও র্যাব ঘেরাও করে রাখে।
শাহজাহানপুর শিল্পী হোটেলের পাশে মতিঝিল থানা বিএনপি ও যুবদল মিছিল বের করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মজনু, মতিঝিল থানা বিএনপি সভাপতি কমিশনার সাজ্জাদ জহির, ছাত্রদল দক্ষিণ-এর সভাপতি হাবিবুর রশিদ হাবিব, ছাতনেতা মিজানুর রহমান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের রফিক হাওলাদার প্রমুখ। মালিবাগ ও শান্তিনগর এলাকায় মিছিল বের করার উদ্যোগ নিলেও র্যাব-পুলিশের পাহারায় দিনভর একটি বাসায় অবরুদ্ধ ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, রফিক শিকদার, কাজী আসাদসহ শতাধিক নেতাকর্মী। ধানমন্ডিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ঢাকা জেলা সভাপতি আবদুল মান্নানের বাসার সামনে সকাল থেকেই র্যাব-পুলিশের গাড়ি অবস্থান নেয়। কোনো নেতাকর্মী বাসা থেকে বের হতে কিংবা ঢুকতে পারেনি।
এদিকে বিএনপি ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক ও ঢাকা সিটি মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও সদস্যসচিব আব্দুস সালাম এক বিবৃতিতে হরতাল সফল করায় মহানগর নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ হরতাল চলাকালে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের হামলা ও আটকের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে আটক নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দোকানপাট বন্ধ ছিল। কয়েকটি লোকাল বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। সকাল ৬টার দিকে মিরপুর ও পল্লবীতে জামায়াতে ইসলামী হরতাল সমর্থনে ঝটিকা দুটি মিছিল বের করে। তবে পুলিশের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, হরতাল সমর্থনে মিরপুরে কোনো মিছিল হয়নি। পুলিশের মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, হরতালের পক্ষে কোনো পিকেটিং বা মিছিল হয়নি। তবে হরতালের বিপক্ষে মিরপুর-১, মিরপুর-১০, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও পল্লবীতে ছোটো ছোটো মিছিল হয়েছে। এ এলাকায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলেও জানান তিনি। এদিকে মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সহাবস্থান করছেন। মিরপুরের দারুসসালাম টাওয়ারে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মোনায়েম জানান, শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন হচ্ছে। হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল-মিটিং বা পিকেটিং হয়নি।
রাজধানীর ৭ পয়েন্টে জামায়াতের মিছিল : ব্যাপক পুলিশি তত্পরতার মধ্যেও গতকাল হরতালের সমর্থনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রাজধানীর ৭টি পয়েন্টে মিছিল ও সমাবেশ করে ঢাকা মহানগরী জামায়াত। দলের বিভিন্ন থানা শাখার যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর মতিঝিল, রামপুরা, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, খিলগাঁও এবং বংশালে এসব ঝটিকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে মতিঝিল, রামপুরাসহ বিভিন্ন স্থানে মিছিলে হামলা চালায় পুলিশ। এ সময় মতিঝিল থেকে শিবিরের ঢাকা মহানগরী (পূর্ব) সভাপতি ইয়াছিন আরাফাতসহ জামায়াত-শিবিরের ২০ জনকে আটক করা হয়। এছাড়া সারাদেশে দলের দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে মিছিলে পুলিশি হামলা ও গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ এমপি। এক বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে আটকদের মুক্তির দাবি করেন।
জামায়াতে ইসলামী রামপুরা ও বাড্ডা থানার উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৮টায় রামপুরা টিভি সেন্টার থেকে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও দলের ঢাকা মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুলের নের্তৃত্বে শুরু হওয়া মিছিলটির শেষ মুহুর্তে পুলিশ হামলা চালায় এবং ৪ জনকে আটক করে।
মিছিলের আগে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সরকার বিরোধী দলের কর্মসূচিতে পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী ক্যাডারদের মাঠে নামিয়ে দিয়েছে; যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চূড়ান্ত দলিল।
মতিঝিল ও পল্টন থানা জামায়াতের উদ্যোগে সকাল ১০টায় মতিঝিল এলাকায় একটি মিছিল বের করে। মহানগরী নেতা ফরিদ হোসাইন, পল্টন থানা আমির মোকাররম হোসাইন খান ও মতিঝিল থানা সেক্রেটারি কামাল হোসাইনের নের্তৃত্বে মিছিলটি ক্রীড়া ভবন এলাকা থেকে শুরু হয়ে শাপলা চত্বরের দিকে যাওয়ার একপর্যায়ে জনতা ব্যাংক করপোরেট অফিসের কাছে পুলিশ পেছন থেকে অতর্কিত লাঠিচার্জ করে মিছিলটিকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে মিছিলটি কিছু দূর এগিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় শিবির নেতা ইয়াছিন আরাফাতসহ দুইজনকে আটক করা হয়। একজনকে পুলিশ বুট দিয়ে বুকের ওপর চেপে ধরে নির্যাতন করে।
যাত্রাবাড়ী থানা জামায়াতের উদ্যোগে সকাল ৬টায় একটি মিছিল ধলপুর থেকে শুরু হয়ে সায়েদাবাদ ব্রিজের কাছে গিয়ে শেষ হয়। এতে নের্তৃত্ব দেন থানা সেক্রেটারি মাহমুদ হোসেন। খিলগাঁও ও সবুজ থানার উদ্যোগে সকাল ৮টায় একটি মিছিল শান্তিপুর থেকে শুরু হয়ে তিলপাপাড়া গিয়ে শেষ হয়। এতে নের্তৃত্ব দেন সগির বিন সাঈদ ও সামসুর রহমান প্রমুখ। পল্লবী ও কাফরুল থানার উদ্যোগে সকাল ৬টায় মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় একটি মিছিল বের হয়। এতে নেতৃত্ব দেন পল্লবী থানা আমির আবদুস সালাম, কাফরুল থানা আমির লস্কর মোহাম্মদ তাসলীম ও সেক্রেটারি আনোয়ারুল করীম।
বংশাল ও কোতোয়ালি থানার উদ্যোগে সকাল ৬টায় একটি মিছিল আগাসাদেক রোড থেকে শুরু হয়ে বংশাল গিয়ে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন কোতোয়ালি থানা আমির আবদুছ ছবুর মাতুব্বর, বংশাল সেক্রেটারি এসএম আহসান উল্লাহ প্রমুখ। এছাড়া গুলশান-বিমানবন্দর ও দক্ষিণখান থানার উদ্যোগে সকাল ৬টায় হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। এতে নেতৃত্ব দেন গুলশান থানা আমির এআরএম মনির, দক্ষিণখান থানা আমির আতিকুর রহমান। মহাখালী ওয়ারলেস থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে হাজারীবাড়ী হয়ে মহাখালী বাজার গিয়ে শেষ হয়।
সমমনাদের হরতাল পালন : বিএনপির ডাকা হরতালে সমমনা দলগুলো সমর্থন দিলেও বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর কোথাও ওইসব দলের নেতাকে পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। তবে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপা ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি মিছিল করার প্রস্তুতি নিয়েছিল। জাগপা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুত্ফর রহমানের নেতৃত্বে সকাল ১১টায় পুরানা পল্টন মোড়ে একটি মিছিলের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। অন্যদিকে দুপুর সোয়া দুইটায় শাপলা চত্বর জনতা ব্যাংকের সামনে লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদীর নেতৃত্বে ১০-১৫ দলের একটি দল মিছিল করতে চাইলে পুলিশি অ্যাকশনে পালিয়ে যায়।
হরতালে ফাঁকা রাজপথ মুখর ছিল আ’লীগের মিছিলে : পুলিশি বাধার মুখে গতকালের হরতালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ঢাকার রাস্তায় দাঁড়াতে না পারলেও ফাঁকা রাজপথ মুখর ছিল শাসক দল আওয়ামী লীগের মিছিলে। হরতাল ঠেকাতে তারা পুলিশের পাশাপাশি রাজপথে অবস্থান নেয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুলিশি নিরাপত্তায় হরতালবিরোধী মিছিল-সমাবেশ নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিনভর দখলে রাখে। দলের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে হরতালবিরোধী মিছিল-সমাবেশ করে। এছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্নম্ন স্থানে মোটরসাইকেল শোভাযত্রা করেছে।
আওয়ামী লীগের হরতালবিরোধী মিছিলের মূল কেন্দ্র ছিল মূলত বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কার্যালয়কে ঘিরে। এখানে হয়েছিল তাদের সবচেয়ে বড় জমায়েত। সকাল থেকে এখানে রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। নেতাকর্মীদের পদচারণায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুখরিত হয়ে ওঠে। শত শত নেতাকর্মী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় এবং হরতালবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। কখনও কখনও প্রেস ক্লাব ও এর আশপাশের সড়কগুলোতে মিছিল করে।
ছাত্রলীগের হরতালবিরোধী কর্মসূচি : হরতাল ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে ছিল ছাত্রলীগ। দেশের বিভিন্ন স্থানে হরতালের বিপক্ষে মিছিল-সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ। দিয়েছে সশস্ত্র পাহারা ও মহাড়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ বিভিন্ন শহর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিছিল ও সমাবেশ করে সংগঠনটি। ভোর থেকে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাহারা ও মহাড়া দেয়। বেলা ১১টায় চারুকলার সামনে হরতালবিরোধী সমাবেশ করে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। ঢাবি সভাপতি মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে এতে কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও ঢাবি সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ বক্তৃতা করেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে ধানমন্ডি ও উত্তরায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ করা হয়। বেলা ১১টায় ধানমন্ডি ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এতে নেতৃত্ব দেন।
হরতাল চলাকালে ছাত্রলীগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও কবি নজরুল কলেজে হরতালবিরোধী মিছিল করে। জবিতে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বের করা মিছিলটি ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে জনসন রোড, রায়সা বাজার মোড় এবং পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আয়োজিত সমাবেশে মিলিত হয়। দুপুর ১২টায় কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে হরতালবিরোধী মিছিল বের করে। দুপুরে তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগ কলেজের আশপাশের রাস্তায় মিছিল করে।
দূরপাল্লার বাস চলেনি : হরতাল চলাকালে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, সারিতে সারিতে বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। পরিবহন কর্মীরা জানান, বিকাল ৫টায় হরতাল শেষ হওয়ার পরই বিভিন্ন গন্তব্যে বাস ছেড়ে যাবে। এদিকে রাজধানীতে সব ধরনের কাউন্টার সার্ভিস বাস চলাচল বন্ধ ছিল। তবে বিআরটিসিসহ কিছু লোকাল বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। এসব বাসে যাত্রীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। এ সুযোগে রাজধানীর ভিআইপিসহ বিভিন্ন সড়কে রিকশা ও ভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে। গাড়ি না পেয়ে যাত্রীরা বিকল্প হিসেবে রিকশা ও ভ্যানে চড়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। এদিকে লঞ্চ চলাচলের পরিমাণ কম ছিল। গতকাল সকাল থেকে সদরঘাট ছিল যাত্রীশূন্য। একই অবস্থা দেখা গেছে ট্রেনের ক্ষেত্রে। সরকারি এ পরিবহন চলাচল করলেও যাত্রীর অভাব ছিল। বেশিরভাগ ট্রেনের আসন ফাঁকা রেখে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।
৫ জনকে দণ্ড দেয়ায় ডিএমপি’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তি : ডিএমপি’র মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা এসএম আশরাফুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হরতালে পিকেটিংয়ের দায়ে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় পাঁচজনকে দণ্ড দেয়া হয়েছে। রামপুরা থানায় ইউসুফ মজুমদার এবং মতিঝিল থানায় মো. ইয়াছিন ও মো. ইউসুফ আলীকে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড, পল্টন থানায় মো. সাহাদাত ও মো. নাছিরকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

No comments: