http://themonthlymuktidooth.blogspot.com

Monday, November 21, 2011

ড. আকবর আলি খান তত্ত্বাবধায়ক সমঝোতা না হলে নির্বাচন অনিশ্চিত


বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাজনৈতিক সমঝোতার একটি ইস্যু। একতরফাভাবে এর পরিবর্তন আনা হলে শাসনতন্ত্রে সমস্যা তৈরি হবে। দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ভিত্তিতে শীঘ্রই এ ইস্যুতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। নইলে আগামী সংসদ নির্বাচনে অনিশ্চয়তা কাজ করবে বলে মন্তব্য করলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। গতকাল বিকালে গুলশানের বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন দেশের বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ।

দেশের সার্বিক অবস্থা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা, প্রধান দুই রাজনৈতক দলের কর্মকাণ্ড, বিদ্যমান অর্থনীতি, পুঁজিবাজার, মন্ত্রিসভা ও আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলাপে ড. আকবর আলি খান বলেন, গত চার দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি যতটা এগিয়েছে, ঠিক ততটাই পিছিয়েছে রাজনীতি। অবশ্য আশাবাদী ড. খান বলেন, সামনে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রে দেশ সমানভাবে এগিয়ে গিয়ে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে ড. আকবর আলি খান বলেন, ১৯৯৬ সালে এক সংঘাতময় পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গ্রহণ করে। এখন একতরফাভাবে এ ব্যবস্থার পরিবর্তন করা হলে শাসনতন্ত্রে সমস্যা তৈরি হবে। এ ব্যাপারে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা বা সিদ্ধান্ত গৃহীত না হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে অনিশ্চয়তা কাজ করবে। পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সংকট নিয়ে তিনি বলেন, তাৎক্ষণিক বা চটজলদি সমাধানে পুঁজিবাজার ইস্যুতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যে ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে তাতে চলমান সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। পুঁজিবাজারে ধস নামানোয় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সরকার বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে পাবে না। সরকারি যেসব কর্মকর্তা পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারিতে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ না করে এ বাজারকে তার মতো ছেড়ে দেওয়া উচিত। সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, এ নিয়ে কখনোই তিনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট ছিলেন না। বর্তমান অর্থনীতির বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের মূল্যায়নের ভিত্তিতে। তার মতে, দেশে বর্তমানে অর্থ প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ কমছে, রয়েছে অবকাঠামোগত ঘাটতিও। অর্থমন্ত্রী এ বছর যে হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করেছেন তাতে সংশয় দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। আমদানি ব্যয় বাড়ছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি না বাড়ায় ডলারের উচ্চমূল্যের ফলে টাকার অবমূল্যায়ন হবে। সার্বিকভাবে রিজার্ভ পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ব্যয় বাড়ছে যা অর্থনীতির জন্য শুভ নয়। এর জন্য সরকারকে নতুন করে মূল্যস্ফীতি হ্রাস ও টাকার মূল্য বাড়াতে অবিলম্বে উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারের অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তবে এ সরকারের আমলে কৃষি খাতে উৎপাদন বেড়েছে। এ বছরের উৎপাদনও সন্তোষজনক। রাজস্ব আদায়ও ভালো। কিন্তু ভৌতঅবকাঠামোগত যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। ভারতের মন্ত্রিসভার সঙ্গে দেশের মন্ত্রিসভার কার্যক্রম মূল্যায়ন করে সাবেক উপদেষ্টা বলেন, কাজে গতি সৃষ্টির জন্য ভারতের কর্মসভার মেয়াদকালে চার থেকে পাঁচবার মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন হয়। কিন্তু বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত একবারও মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে মন্ত্রিপরিষদের কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ড. আকবর আলি খান বলেন, তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে হৈ চৈ করে লাভ নেই। কারণ আমন মৌসুম ছাড়া তিস্তায় পানি থাকে না। বরং ভারত তার অংশের তিস্তা অববাহিকায় যেসব প্রকল্প তৈরি করবে, তা বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সে কারণে তিস্তা বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অববাহিকাভিত্তিক চুক্তি হওয়া প্রয়োজন।

No comments: