http://themonthlymuktidooth.blogspot.com

Saturday, January 14, 2012

নির্বাচনকমিশনের ক্ষমতাবাড়ানোরউদ্যোগ নেই

যে পদ্ধতির সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, চারটি মন্ত্রণালয় ইসির পরামর্শে চললে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব’ Å ঝুলে আছে একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব Å তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির বিলুপ্তির সময় ইসির ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা বাড়ানোর কোন প্রচেষ্টা নেই সরকারের। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্তির সময় বর্তমান সরকার জোর দিয়ে বলেছিল ইসিকে শক্তিশালী, স্বাধীন করা হবে এবং তাদের ক্ষমতা বাড়ানো হবে। বাস্তবে ইসির ক্ষমতা বাড়েনি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর রাষ্ট্রপতি শুধুমাত্র কমিশনের নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছেন। এদিকে ইসির একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাবের ব্যাপারে গত ছয় মাসেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোন মতামত দিতে পারেনি। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সংসদ বর্জন এখনো অব্যাহত রয়েছে। সংবিধান সংশোধন কমিটির কাছেও ইসির সংস্কার প্রস্তাব গুরুত্ব পায়নি। এবার খোদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সংস্কার প্রস্তাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদা ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাক্ষাতের সময় চেয়েছি। সময় পেলে সংস্কার প্রস্তাব তার হাতে তুলে দেবো।’ তিনি বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হলে নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। গত বছরের জুন মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অনুষ্ঠিত সংলাপে তিনটি আইন ও একটি বিধিমালার খসড়া উপস্থাপন করেছিল কমিশন। এগুলো হচ্ছে-গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) আরো সংশোধন, নির্বাচনী প্রচারের ব্যয় (জনতহবিল) আইন, সিইসি ও ইসি নিয়োগ পদ্ধতি, সীমানা নির্ধারণ আইন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও একটি বিধিমালার খসড়া। আরপিও ৪৪ (ই) ধারার সংশোধনী প্রস্তাবে বলা আছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ফল ঘোষণার পর ১৫ দিন পর্যন্ত মহানগর পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার ও তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তাদের ইসির সঙ্গে আলোচনা না করে বদলি করা যাবে না। এছাড়া সংসদ নির্বাচনের পূর্ববর্তী ৯০ দিন সময়ের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের কাছে রাখতে চায় নির্বাচন কমিশন। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনের সময় যে পদ্ধতির সরকার ক্ষমতায় থাকুক না কেন চারটি মন্ত্রণালয় ইসির পরামর্শে কাজ করলে দলীয় প্রভাবমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব। আরপিও ৪৪ (বি) ধারা সংশোধনের প্রস্তাব রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এ ধারার মাধ্যমে নির্বাচন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে চায় কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতিটি সংসদীয় আসন ইসির নিজস্ব এক বা একাধিক পর্যবেক্ষক দল থাকবে। তারা প্রতিদিন প্রার্থীদের নির্বাচনী খরচের উপর নজর রাখবে। কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী খরচের লংঘনের অভিযোগ পেলে তাও তারা খতিয়ে দেখবে। প্রার্থীদেরও ব্যয়ের প্রতিদিনের হিসাব প্রতি সাতদিন পর জমাদানের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। কোন প্রার্থী এ বিধান লংঘন করলে পর্যবেক্ষক দল ঐ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে। নির্বাচন কমিশনের এই সংস্কার প্রস্তাব সংক্রান্ত সংলাপ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বর্জন করে। তাদের সঙ্গে সংলাপে যোগ দেয়া নিয়ে কমিশনের একাধিকবার চিঠি আদান-প্রদান হয়েছে। বিএনপি ও চার দলীয় জোট সংলাপে তো যায়ই নি, এমনকি লিখিত কোন মতামতও দেয়নি। আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংলাপ দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখে। দু’দফা সময় নিয়ে সংলাপে যোগ দেয়ার পর আওয়ামী লীগ কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কার প্রস্তাব সম্পর্কে কোন ধরনের মতামত দেয়নি। দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কমিশনকে জানান, তারা কমিশনের প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে এসেছেন। এই মুহূর্তে কোন মতামত দেয়া সম্ভব নয়। দলের সভানেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দলীয় মতামত পরে এসে নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন। কিন্তু গত ছয় মাসেও আওয়ামী লীগের মতামত জানানো হয়নি। এমনকি নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগকে এ বিষয়ে কোন তাগাদা দেয়নি। এ বিষয়ে সিইসি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু তারা আর আসেননি। এখন অপেক্ষার সুযোগ নেই। বিএনপির ব্যাপারে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হলেও সাড়া দেয়নি। পরবর্তী কমিশন এসে তাদের সঙ্গে আলোচনা করবে। এক পর্যায়ে গত জুনে সিইসির নেতৃত্বে দুই কমিশনার সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে। তাদের লিখিত প্রস্তাব দাখিল করে। কিন্তু কমিশনের মাত্র একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। তা হলো-নির্বাচন সংক্রান্ত কোন বিষয়ে স্থগিতাদেশ দেয়ার আগে ইসিকে নোটিস দিয়ে শুনানির সুযোগ দিতে হবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়। ওই সংলাপে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল এবং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। সংলাপ শেষে বঙ্গভবন থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। সুপারিশে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি স্থান পেয়েছে। একটি অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা যায় কিনা তা বিবেচনায় নিয়ে আইন বা বিধি প্রণয়নের সুপারিশ করেছেন রাষ্ট্রপতি। বিষেজ্ঞরা মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা আরো না বাড়ানো হলে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা দুরূহ। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীতে নির্বাচন কমিশনে কোন ক্ষমতায় বাড়ানো হয় নি। বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হওয়ায় জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের উপর রাজনৈতিক সরকারের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়নের ক্ষমতা ইসির হাতে ন্যস্ত করতে হবে। যাতে সরকার ইসির অমতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি বা পদোন্নতি দিতে না পারে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। প্রসঙ্গত, খোদ নির্বাচন কমিশনের সচিব নিয়োগই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দিয়ে থাকে।

No comments: