http://themonthlymuktidooth.blogspot.com

Tuesday, December 22, 2015

পৌর নির্বাচন যেন সিটি মার্কা না হয়:এরশাদ



জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন,  পৌর নির্বাচন যেন সিটি মার্কা না হয়।  সিটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে গিয়ে দেখেছে নয়টার মধ্যে সব ভোট দেওয়া শেষ।  নির্বাচন কেন্দ্রে আগুন জ্বলছে, মানুষ মরছে, অস্ত্রের ঝনঝনানিও  শুনতে পাচ্ছি।  আমাদের দুই প্রার্থীকে জেলে পাঠানো হয়েছে।  ভয়ে আমাদের অর্ধশতাধিক প্রার্থী তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছে। 

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি মহানগর দক্ষিণের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

এরশাদ বলেন, আমি একাধিকবার বলেছি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড নেই।  তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন, যাতে উনি মন্ত্রী এমপিদের লাগাম টেনে ধরেন।  কিন্তু কেন ? নির্বাচন কমিশনের নিজেরইতো ক্ষমতা আছে ডিসি এসপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার।  নির্বাচন কমিশন একটি প্রতিষ্ঠান, এটা একটি দায়িত্ব।  অথচ উনার ভাব দেখে মনে হচ্ছে  চাকরি করছেন। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলেছি এটা সরকার পরির্বতনের নির্বাচন নয়, এ নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হয়।  কিন্তু আমার মনে হচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সুযোগ নেই। 

সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, যে গণতন্ত্রের জন্য ক্ষমতা ছেড়েছিলাম আজ কোথায় সে গণতন্ত্র! আজ বুদ্ধিজীবীরা কথা বলতে পারে না, সাংবাদিকরা লিখতে পারে না।  মানুষের কন্ঠ আজ বাকরুদ্ধ।  এভাবে একটি দেশের গণতন্ত্র চলতে পারে না। 

তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দিয়েছিলাম, আমার হাতে কোন রক্তের দাগ ছিলো না।  আজ যারা ক্ষমতায় আছে তারা কি পারবে ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দিতে? পারবে না, কারণ জনগণকে তারা ভয় পায়।  দেশবাসীর প্রতি তাদের আস্থা নেই। 

এরশাদ বলেন, নুর হোসেনের বুকে লেখা গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার মুক্তি পাক, এ লেখাটি বুকে না হয় নুর হোসেন নিজে লিখেছে কিন্তু তার পিঠে কে লিখে দিয়েছিলো?  আমি ক্ষমতায় আসতে পারলে কে লিখেছিলো আর কে তাকে হত্যা করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছিলো তা খুঁজে বের করবো। 

আজ নুর হোসেন, ডা. মিলন দিবস পালন করা হয়।  অথচ সারের দাবিতে ১৮ জন কৃষকে গুলি করে হত্যা করা হলো, কানসাটে ২০ জনকে হত্যা করা হলেও তাদের দিবস পালন করা হয় না।
তিনি নিজের দল সম্পর্কে আক্ষেপ করে বলেন, দলকে এখনও শক্তিশালী  করতে পারি নাই।  পার্টিকে সংগঠিত করতে যেয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সহযোগিতা পাই না।  অনেক ক্ষেত্রে পোস্টারে নাম দেওয়ার জন্যও কোন নেতাকে পাওয়া যায় না।  এদল আমার একার নয় তোমাদের সবার।  আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নাই।  মানুষ বিকল্প খুঁজছে, তোমরা আমাকে শক্তিশালি প্রার্থী দাও, আগামীতে আমরা অবশ্যই রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবো। 

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ।  নগর দক্ষিণের  সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেলের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিএম কাদের, প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খাঁন, সাইদুর রহমান টেপা, এসএম ফয়সল চিশতি, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন মিলন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, নুরুল ইসলাম নুরু, সুজন দে, শেখ মাসুকুর রহমান। 

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, কারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, জাপা কেন্দ্রীয় নেতা আলমগীর সিকদার লোটন, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, বেলাল হোসেন , মোবারক হোসেন আজাদ, নাজমা আকতার, আমিরুদ্দিন আহমেদ ডালু, জামাল রানা প্রমূখ। 

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির যে উন্নয়নের ইতিহাস আছে তা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের নাই।  সেটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।  তিনি বলেন, এখনকার সরকার প্রধানরা রাজধানীর বাইরে তেমন একটা যান না।  যার কারণে দেশের তৃণমূল পর্যায়ের সমস্যা সমাধান করা কঠিন হয়ে দাড়ায়।  বিরোধীদলের নেতা বলেন, সিলেট এক আসন যার ক্ষমতা তার।  জাতীয় পার্টি দূর্যোগ মুহূর্তেও সিলেটে আমাদের ৮টি আসন পেয়েছিলো।  আগামীতে যেন আমরা সিলেট-১ আসন পুনরুদ্ধার করতে পারি সে লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। 

জিএম কাদের তার বক্তব্যে বলেন, রাজনীতিতে এখন চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।  আন্দোলন সংগ্রাম নেই তবুও মানুষের মাঝে অস্থিরতা এবং অজানা আতংক বিরাজ করছে।  যার কারনে শুধু সামাজিক ক্ষেত্রে নয়, অর্থনীতিতেও অস্থিরতা বিরাজ করছে।  তিনি বলেন, আজ সরকার একদিকে আর বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণ একদিকে।  আমার ধারণা সরকারের দমন-নিপীড়ন জনগণকে সরকার থেকে অনেক দুরে ঠেলে দিচ্ছে। 

সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হিসেবে সৈয়দ আবু হোসে বাবলা এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জহিরুল আলম রুবেলের নাম ঘোষণা করেন।  এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টি বিশাল শোডাউন করে।  মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত বর্ণিল সাজে সাজানো হয়।  বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড থেকে এরশাদ, বাবলা এবং রুবেলের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন ব্যানার এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে সম্মেলনে অংশ নেয়।   


Collection : Majid, Peelkhana Post Office Mosque, 1 No Gate, Dhaka

No comments: