http://themonthlymuktidooth.blogspot.com

Thursday, May 28, 2015

"বিনা ভোটের কমিটি প্রত্যাখ্যান প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির !!!"



ঘোষিত জাতীয় প্রেসক্লাবের কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি। কমিটির পক্ষে সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 
বৃহস্পতিবার নির্বাচন ছাড়াই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যদের একটি অংশ নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করেছে। হঠাৎ করে ডাকা দ্বি বার্ষিক সভা থেকে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে শফিকুর রহমানকে সভাপতি ও  কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থক সাংবাদিকদের প্রাধান্য রেখে এ কমিটি  ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক হিসেবে পরিচিত কয়েকজন সাংবাদিকও রয়েছেন। তবে এই সাধারণ সভায় একশ’র কম সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকালে ঘোষিত এ কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘ ৬০ বছরের ঐতিহ্যলালিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রেস ক্লাব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঐকান্তিক আগ্রহ, আন্তরিকতা এবং অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভবপর হয়নি। ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেবলমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই এক কমিটির কাছ থেকে আরেক কমিটিকে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রথা রয়েছে। এর কোন রূপ ব্যত্যয় এবং লংঘন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যবৃন্দ এবং দেশের সাংবাদিক সমাজ কোন ভাবেই মেনে নেবে না। 
প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির গত ২৫ ও ২৬শে মে ২০১৫ অনুষ্ঠিত সভায় আগামী ২৭ জুন ২০১৫ অতিরিক্ত সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভার আলোচ্য বিষয় দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন। ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ক্লাবের স্বত্বাধিকারী বা মালিক যেহেতু স্থায়ী সদস্যবৃন্দ, সুতরাং তাদের সম্মিলিত প্রজ্ঞা, দায়িত্বশীলতা এবং সংকট নিরসনের আন্তরিক প্রয়াসের উপর ব্যবস্থাপনা কমিটি সব সময়ই আস্থাশীল। আগামী ২৭ জুন অনুষ্ঠেয় অতিরিক্ত সাধারণ সভাতেই সংকট নিরসনের পন্থা বের করা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এই অর্šÍবর্তীকালীন সময়ে অন্য কারো পক্ষে দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা করার নৈতিক ও আইনগত কোনো এখতিয়ার বা বৈধতা নেই।

জাতীয় প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটি সুষ্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছে যে, ২৮ শে মে ২০১৫ তারিখে কোনো দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা নির্ধারিত ছিল না। ইতিপূর্বে আহুত সভাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বাতিল করা হয়েছে এবং সাধারণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা সদস্যদের এর মধ্যেই অবহিত করা হয়েছে। কাজেই দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভার নামে যারা তথাকথিত একটি সভা করেছেন তা গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট লংঘন এবং ক্লাবের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিপন্থী। একই সঙ্গে তা জাতীয় গণতন্ত্র এবং প্রেস ক্লাবের স্বার্থ ও ঐক্য বিরোধী।  এটা ক্লাবের অখ-তা এবং সাংবাদিক সমাজের বৃহত্তর ঐক্য বিনষ্ট করবে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। ক্লাব পরিচালনা করে ক্লাবের বৈধ কমিটি। ২৭ জুন ২০১৫ এর অতিরিক্ত সাধারন সভাই ক্লাবের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে। তাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সকল  স্থায়ী সদস্যের প্রতি আমাদের আবেদনÑক্লাবের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও অখন্ডতা রক্ষার ব্যাপারে আপনারা যার যার অবস্থান থেকে বলিষ্ঠ ও দৃঢ় ভূমিকা পালন করুন। 


Courtesy by The Daily Manob Jamin

Sunday, May 24, 2015

সাংবাদিকদের সামনে ঘোর দুঃসময়-ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী



খ্যাতিমান ব্রিটিশ ম্যাগাজিন ইকোনমিস্টের সাম্প্রতিকতম সংখ্যায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা আর খুব বেশি দিন থাকবে না। আরো বলা হয়েছে, একটানা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বহাল থাকতে বাংলাদেশের নেতারা অব্যাহতভাবে ‘মরিয়া সংগ্রাম’ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা পুরো দেশকে অন্ধকার অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশটির রাজনীতিকদের এই যুদ্ধে যদি তিন নিহত ব্লগারের মৃত্যুকে প্রথম বলিদান হিসেবে ধরে নেয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা আর খুব বেশি দিন থাকবে না।
নিবন্ধটি প্রধানত ব্লগারদের নিরাপত্তা নিয়ে লেখা হলেও এর মর্মার্থ কারো কাছে অস্পষ্ট নয়। পত্রিকাটি একই সাথে শাহবাগীদের আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন এবং ইসলামপন্থীদের সাথে সরকারের কথিত আঁতাতের বিষয় নিয়েও মন্তব্য করেছে। তবে পত্রিকাটির চূড়ান্ত বিশ্লেষণ হচ্ছে, বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা সঙ্কুচিত হতে হতে এখন শূন্যের কোঠায় পৌঁছার অপেক্ষায়। সংবাদপত্র বা মিডিয়ার বিরুদ্ধে নানা ধরনের নতুন কালাকানুন আরোপের বাইরেও হুমকি প্রতিনিয়তই আসছে। ১৯৭২-৭৫ সালে শেখ মুজিবের শাসনকালেও এ ধরনের কালাকানুন ও সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে ভূমিকা নেয়ার প্রেক্ষাপটে সরকারের এক ধরনের দালালের আবির্ভাব ঘটেছিল মিডিয়ার ভেতরেই। বর্তমান সময়েও সংবাদপত্র দলনের পক্ষে একইভাবে দাঁড়াচ্ছেন পুরনো ও নতুন দালাল শ্রেণী। সংবাদপত্রে প্রকাশিত কোনো সংবাদ সরকারের পছন্দ না হলে সরকার যেমন রা রা করে উঠছে, তেমনি ভেতর থেকেও রা রা করছে কেউ কেউ। এটা অনেকটা ডালের আগায় বসে ডালের গোড়া কেটে দেয়ার মতো। ১৯৭৫ সালে এভাবে আগায় বসে গোড়া কেটে দিয়ে তারা বিপন্ন হয়ে পড়েছিলেন, এবারও এর কোনো ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত আমাদের দেশে নির্বাচনের নামে যেসব তামাশা অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা নিয়ে দেশে ও সারা বিশ্বে ধিক্কার উঠেছে। পৃথিবীর কেউই নির্বাচনের নামে এ ধরনের প্রহসন মেনে নেননি, বরং তারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অবিলম্বে আরেকটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন। সরকার এসব কথা মোটেও আমলে নেয়নি। গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছিল বিরোধী সব রাজনৈতিক দল। তাতে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪ আসনে সরকার মনোনীত প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’ ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন নিয়ে বানরের পিঠা ভাগের এমন ঘটনা আধুনিককালে বিরল। শত বাধানিষেধ সত্ত্বেও দেশের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া সে নির্বাচনের যে চিত্র তুলে ধরেছিল, তা ছিল চরম লজ্জাকর ও ন্যক্কারজনক। সেখানে অনেক কেন্দ্রেই কেউ ভোট দিতে যায়নি। প্রায় ৫০টি কেন্দ্রে একটিও ভোট পড়েনি। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা পর্যন্ত ওই নির্বাচনকে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। কেন্দ্রে উপস্থিত তাদের কোনো লোকও ভোট দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি।
এমনই জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার শুধু র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবির জোরে বিরোধী দলকে দমন করে এখন ক্ষমতায় আসীন। ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের প্রহসনের পর আয়োজন করা হলো উপজেলা নির্বাচন। এ নির্বাচন নির্দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয় বলে বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। তিন দফায় এর আয়োজন করেছিল নির্বাচন কমিশন। প্রথম দফায় সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীদের ভরাডুবি ঘটে। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জয় লাভ করেছিলেন বিরোধীদল সমর্থিত প্রার্থীরা। ফলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা নির্বাচনে সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ব্যাপক ভোট ডাকাতির ব্যবস্থা করে। তারও সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়। ফলে জনগণের রায় থেকে যায় সুদূরপরাহত।
কিন্তু সরকার এখানেই ক্ষান্ত হয়নি, বিরোধী দলের সমর্থনে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেসব মেয়র বা উপজেলা চেয়ারম্যানকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ইতোমধ্যে হয় বরখাস্ত করা হয়েছে; নয়তো কারাবন্দী করা হয়েছে। মেয়রের অনুপস্থিতিতে সে দায়িত্ব পাওয়ার কথা প্যানেল মেয়রদের। সে প্যানেল মেয়র যদি সরকার সমর্থক না হয়ে থাকেন, তবে নানা অজুহাতে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করে দৌড়ের ওপর রেখে নিজেদের কাউকে মেয়র পদে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ভিন্নমত ও ভিন্ন রাজনীতির অস্তিত্ব বিলোপ করে দিতে চাইছে সরকার। 
ইতোমধ্যে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। জাতিসঙ্ঘ থেকে শুরু করে সারা বিশ্বের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। বিরোধী দল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সম্প্রতি লাগাতার অবরোধ ও প্রায়ই হরতালের কর্মসূচি দিতে শুরু করে। এতে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার কৌশল হিসেবে সরকার তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। সঙ্গত কারণেই ধরে নেয়া হয়েছিল যে, এই নির্বাচনও কিছুতেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। তা সত্ত্বেও একটি নিরীক্ষা হিসেবেই হোক কিংবা বিদেশীদের চাপেই হোক বিরোধী দল শেষ পর্যন্ত এ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি হয়। তারা হয়তো ধরে নিয়েছিল, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সরকার অন্তত এ তিনটি সিটি নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করবে। তাতে যে জেতে জিতুক। 
কিন্তু সরকারের এ উপলব্ধি ছিল যে, তাদের জনসমর্থন এতটাই নেমে গেছে যে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় লাভ করা তাদের জন্য একেবারেই অসম্ভব। এবার যাতে মিডিয়া শোরগোল তুলতে না পারে, এ জন্য সূক্ষ্ম আয়োজন সম্পন্ন করে রাখা হয়। প্রায় সব মিডিয়াই সরকার সমর্থকদের নিয়ন্ত্রিত, তা সত্ত্বেও তাদেরও কিছু-না-কিছু বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে হয়েছে। বিপত্তি সেখানেও । আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। আর সে হিসেবেই বহু ভোটকেন্দ্রে ব্যালটে সিল মেরে রাতের মধ্যেই বাক্স ভরে রাখা হয়। বাকি যা অবশিষ্ট থাকে, সে ভোট নিয়েও ব্যাপক জালিয়াতি ও কারচুপি চালানো হয়। সাংবাদিকেরা যাতে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে কী হচ্ছে তা দেখতে না পারেন, তার জন্যও নির্দেশনা দেয়া হয়। 
এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন একেবারেই সাক্ষীগোপাল ও অন্ধের ভূমিকা পালন করতে থাকে। এ ব্যাপারে কারো কোনো অভিযোগ তারা আমলে নিতেই নারাজ ছিল। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে সিল মেরেছেন। প্রিজাইডিং অফিসাররা সিল মেরেছেন। ক্যাডার ও মাস্তানেরা সিল মেরেছে। নির্বাচনের আগ থেকেই কমিশনার প্রার্থী ও তাদের সম্ভাব্য এজেন্টদের বাড়িতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। যাকে পেয়েছে গ্রেফতার করেছে। অন্যদের হুমকি দিয়ে এসেছে, নির্বাচন কেন্দ্রে গেলেই নাশকতা কিংবা গাড়ি পোড়ানোর মামলায় তাদের আটক করা হবে। এমনই এক ভীতিকর পরিবেশের মধ্যেও নির্বাচন করার ব্যাপারে দুপুর পর্র্যন্ত অটলই ছিলেন বিরোধী দলসমর্থিত প্রার্থীরা। ওই সময়টুকুতে এই প্রার্থীদের সমর্থকেরা যেটুকু সময় পেয়েছিলেন তাতেই তারা লাখ লাখ ভোট পেয়েছেন। পরিস্থিতি টের পেয়ে সরকার একেবারে নির্লজ্জভাবে ভোট জালিয়াতির মহোৎসবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। 
ফলে নির্বাচন একেবারেই অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। শুরু হয় এই ভোটডাকাতির চিত্র গ্রহণে উদ্যোগী সাংবাদিকদের ওপর হামলার পালা। ২৯ এপ্রিল এর কিছু চিত্র ঢাকার সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। এ সম্পর্কিত খবরে দৈনিক যুগান্তরের শিরোনাম ছিল, ‘বিভিন্ন কেন্দ্রে হামলার শিকার সংবাদকর্মীরা/ গুলি, মারধর, নির্যাতন, কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা, ক্যামেরা ভাঙচুর ও টাকা ছিনতাই’। নির্বাচনের কারচুপির ছবি তুলতে গেলে যুগান্তরের ফটোসাংবাদিক ওবায়েদ অংশুমানকে পিটিয়ে তার জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে পুলিশ ও সরকার সমর্থক লোকেরা। যুগান্তর তার ছবিও প্রকাশ করে। পত্রিকাটির রিপোর্টে বলা হয়, এতে একজন সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, এক ডজনেরও বেশি সাংবাদিক হামলার শিকার। দৈনিক সমকালের শিরোনাম ছিলÑ ‘সাংবাদিকদের উপর হামলা’। পত্রিকাটি রিপোর্টে উল্লেখ করে, ‘সিটি নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। অনেককে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। কারো নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেয়া হয়। একজন সাংবাদিকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে এভাবেই সরকারি দলের হামলার শিকার হন তারা। ভোট জালিয়াতির খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে উত্তরা গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে হামলার শিকার হন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি অমিতোষ পাল।...’ । দৈনিক প্রথম আলোর শিরোনাম ছিলÑ ‘২১ সাংবাদিক হামলা ও বাধার শিকার’। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গতকাল মঙ্গলবার তিন সিটি কর্পোরেশনে ভোট গ্রহণ চলাকালে সরকারসমর্থক নেতাকর্মীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন সাংবাদিকরা। যেখানেই সুযোগ পেয়েছে, সেখানেই সাংবাদিকদের ওপর হামলা, ক্যামেরা ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কেন্দ্রছাড়া করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে অন্তত ছয়জনের ওপর হামলা হয়েছে। ভয় দেখিয়ে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছে আরো ১৫ জনকে। ঢাকা বাসাবো উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন একটি অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিক ইয়াসিন হাসান রাব্বি। প্রথম আলোর অন্তত ৮ জন সাংবাদিক হামলা ও বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। সরকারসমর্থক নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশও সাংবাদিকদের বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দিয়েছে।’
ডেইলি স্টারের শিরোনাম ÔSTAY OUT, media/ AL body men assault 10 journos, deny access to polling centres.’ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গতকালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হাতে কমপক্ষে দশজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। কারো কারো মোবাইল ফোন, হাতব্যাগ ও টাকা-পয়সা লুট করা হয়েছে। পোলিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা রিপোর্টার, ফটোগ্রাফার ও ক্যামেরাম্যানদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স এনেক্স ভবনে নির্বাচন কেন্দ্র পরিদর্শনকালে ডেইলি স্টারের দুইজন সাংবাদিক পরিমল পালমা ও মাহবুবুর রহমান খানকে ছাত্রলীগাররা বেধড়ক পিটিয়েছে।’ দৈনিক দিনকালের শিরোনাম ছিলÑ “নির্বাচন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের পেটালো আ’লীগ”। এতেও একই চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। নয়া দিগন্তের শিরোনাম ছিলÑ ‘দক্ষিণের কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ’। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটির ভোটকেন্দ্রগুলোতে সাংবাদিকদের প্রবেশ ছিল অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ। ৮৮৯টি ভোটকেন্দ্রের একটিতেও কোনো সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারেননি। পুরান ঢাকায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও ক্যামেরা পারসনদের হয়রানি ও মারধর, মানিব্যাগ ছিনতাই, ডায়েরি ও ক্যামেরা ভাঙচুর ও ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা উত্তরের পরিস্থিতি ছিল কিছুটা স্বাভাবিক। কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়ার বিষয়ে পুলিশের তৎপরতা ছিল দেখার মতো। তারা অঘোষিতভাবে সাংবাদিকদের, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ক্যামেরাপারসনদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউই এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।’ দৈনিক আমাদের সময় ডট কম লিখেছেÑ সংঘর্ষের ছবি তুলতে পুলিশের বাধা/ ‘শালা গুলি করে মেরে ফেলব!’ ওই রিপোর্টে বলা হয়, ‘দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলছে; পুলিশ নীরব দর্শক। সংঘর্ষের ঘটনা ক্যামেরায় ধারণ করতে এগিয়ে যান বিভিন্ন দৈনিকের ফটোসাংবাদিকরা। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের কিছু না বললেও সাংবাদিকদের একহাত দেখে নিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা তো বলেই ফেললেন, ‘শালা, ছবি তুললে গুলি করে মেরে ফেলব। সাংবাদিকতা করতে আইছস?’ গতকাল দুপুরে পুরান ঢাকার বুলবুল ললিতকলার সামনে এ ঘটনা ঘটে।’ 
দৈনিক ইত্তেফাকের শিরোনাম ছিলÑ ‘হামলার শিকার সাংবাদিকরা’। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ‘সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তিন সিটিতেই হামলা, লাঞ্ছনা ও বাধার শিকার হয়েছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। গতকাল ভোটকেন্দ্রগুলোতে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তুলতে বাধা দেয়ার পাশাপাশি তাদের মোবাইল, মানিব্যাগ, ডায়েরি ও ক্যামেরা ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে দুর্বৃত্তদের হামলায় কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। হামলার শিকার হয়েছে সাংবাদিকদের বহনকারী গাড়িও। এছাড়া দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে এক সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সরকার দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকরাই অধিকাংশ হামলার ঘটনায় জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় পুলিশও সাংবাদিকদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয় ও হয়রানি করে।’ দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সব সংবাদপত্রে একই ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। 
ইতোমধ্যে গত ২১ মে দৈনিক কালের কণ্ঠ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেÑ ‘তদন্ত কমিটিকে পুলিশ ও প্রিজাইডিং অফিসাররা/ সাংবাদিক নির্যাতন হয়নি, পত্রিকার ছবি ভারতীয়’। “ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে গতকাল বুধবার সংশ্লিষ্ট আটটি থানার পুলিশ কর্মকর্তার সবাই এ অভিযোগ অস্বীকার করলেন। তাদের সবারই দাবি, ‘ভোট গ্রহণের দিন সাংবাদিক নির্যাতন বা তাদের কাজে বাধা দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ।’ পুলিশের পক্ষ থেকে এমনও দাবি করা হয় যে, পত্রিকায় সাংবাদিকদের নির্যাতনের যে ছবি ছাপা হয়েছে, তা ভারতীয় পত্রিকা থেকে নেয়া। এর আগে গত ১৭ মে এ দুই সিটির সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারও মৌখিক ও লিখিতভাবে তদন্ত কমিটিকে জানিয়ে দিয়েছেন ভোটকেন্দ্রগুলোতে একাধিক সাংবাদিক প্রবেশ করেছেন। কয়েক মিনিট ধরে কেন্দ্রে অবস্থান করেছেন। কিন্তু তাদের নির্যাতন, বাধা দেওয়া বা নাজেহালের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক ছিল। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ ও প্রিজাইডিং অফিসারের কয়েকজন কালের কণ্ঠকে জানান, প্রকৃত ঘটনা জানিয়ে তারা ঝামেলায় জড়াতে চান না।” এ সম্পর্কে প্রথম আলো একই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সাংবাদিকদের বর্তমান অবস্থা এ রকমই। 
এ দিকে ১১ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল সম্প্রতি সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ২০ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জের কর্মকর্তাদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর একটি ভিডিও কনফারেন্স ছিল। সেখানকার পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন ২৩ এপ্রিল ১১ জন স্থানীয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেন যে, ওই সাংবাদিকেরা প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে বাধার সৃষ্টি করেছেন। তাতে এমনও বলা হয়েছে, ওই ১১ জন সাংবাদিকের কেউ কেউ মাদকাসক্ত। ওই সাংবাদিকেরা যেসব পত্রিকায় কাজ করেন, প্রেস কাউন্সিল সেসব পত্রিকা কর্তৃপক্ষকেও চিঠি দিয়েছে। 
পাদটীকা : গত ২০ মে দৈনিক যুগান্তর লতিফুর রহমান ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব তলব শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়, ‘ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান ও তার স্ত্রী শাহনাজ রহমানের ব্যাংক হিসাবের তথ্যের খোঁজে মাঠে নেমেছে রাজস্ব গোয়েন্দারা। লতিফুর রহমান বাংলা দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের কর্ণধার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) থেকে দেশের ব্যাংকগুলোকে চিঠি পাঠিয়ে এই ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রীর গত সাত বছরের ব্যাংক হিসাব জানতে চাওয়া হয়েছে। সিআইসি রাজস্ব বোর্ডের গোয়েন্দা বিভাগ। রাজস্ব ফাঁকিবাজদের কাছ থেকে কর আদায় করতে সিআইসি বিভিন্ন সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য জানা, অ্যাকউন্ট জব্দ করা ও সম্পদের তথ্য নেয়ার কাজ করে থাকে। ব্যাংকগুলোতে পাঠানো সিআইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘লতিফুর রহমান ও শাহনাজ রহমান বা তাদের পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের একক বা যৌথ নামে আপনাদের ব্যাংকে কোনো ধরনের মেয়াদি আমানত হিসাব, যে কোনো ধরনের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, লকার বা ভল্ট, সঞ্চয়পত্র বা অন্য কোনো ধরনের সেভিংস বা ইন্সট্রুমেন্ট, ইনভেস্টমেন্ট স্কিম বা ডিপোজিট স্কিম বা অন্য কোনো ধরনের বা নামের হিসাব হয়ে থাকলে পত্র প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যেই অত্র বিভাগে তার তথ্য পাঠাবেন।’ 
গণমাধ্যম ব্যবসায় ছাড়াও ট্রান্সকম গ্রুপের বেভারিজ, ফার্মাসিউটিক্যাল, ইলেকট্রনিকস, ভোগ্যপণ্য ও দুগ্ধজাত শিশুখাদ্যের ব্যবসায় রয়েছে। সেভেন আপ, পেপসি, মিরিন্ডা, অ্যাকোয়াফিনা, এসকেএফ বাংলাদেশ লিমিটেড, কেএফসি, পিজা হাটেরও মালিক লতিফুর রহমান। তিনি নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেড, হোলসিম সিমেন্ট লিমিটেড এবং ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান। তিনি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের গভর্নর বোর্ডের সদস্য। 
এ দিকে, সচেতন নাগরিকদের অনেকের ধারণা, সরাসরি যেহেতু সংবাদপত্র দলন আর ভালো দেখা যায় না, অতএব সরকার কান ধরে টান দিয়েছে। মাথা হিসেবে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার বাগে আসবেইÑ এই বোধ করি লক্ষ্য। 
সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com

Courtesy: The Daily Naya Diganta  

Reproduced by: Majid, 42 Lolit Mohon Das Lane, Peelkhana, Lalbag