http://themonthlymuktidooth.blogspot.com

Saturday, November 19, 2011

মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসতে হবে ৪০ হাজার শ্রমিককে কারণ পাসপোর্ট নেই, হাইকমিশনে তৈরিতে ধীরগতি

মালয়েশিয়া থেকে ৪০ হাজারেরও বেশি শ্রমিককে দেশে ফেরত আসতে হবে । এই শ্রমিকরা 'থাম প্রিন্ট' বা আঙ্গুলের ছাপ দিলেও পাসপোর্ট না থাকার কারণে তাদের দেশে ফিরতে হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাসপোর্ট দেয়ার কাজে গতি না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে হাইকমিশনার একেএম আতিকুর রহমান সম্প্রতি বলেন, শ্রমিকদের হাতে লেখা ও এমআরপি দুই ধরনের পাসপোর্টই দেয়া হয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত লোক নিয়োগ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পাসপোর্ট অফিস থেকে ৫৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
হাইকমিশনার বলেন, এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) প্রকল্পের দুটি গ্রম্নপ এখানে কাজ করছে। যে সব শ্রমিক দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য থাম প্রিন্ট দিয়েছে-কেবল তারাই দেশে ফিরে যাচ্ছে। এখানে পাসপোর্ট না থাকার কোন বিষয় নেই। মালয়েশিয়া কর্তৃপৰ থাম প্রিন্ট নেয়ার সময় দুটি অপশন রেখে ছিল। একটি হচ্ছে যাঁরা মালয়েশিয়া থাকতে চান তাদের যেমন থাম প্রিন্ট দিতে হয়েছে। আবার যাঁরা দেশে ফিরে যেতে চান তাঁদেরও থাম প্রিন্ট দিতে হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, যে সব শ্রমিক দেশে ফেরার জন্য থাম প্রিন্ট দিয়েছেন মালয়েশিয়া কতর্ৃপৰ তাঁদের গত ৩১ অক্টোবরের মধ্যে দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশী যে সব শ্রমিক বৈধ হওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেননি তাঁদের টিকেট ও ট্রাভেল ফি জমা দিয়ে মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশনের কাছে সশরীরে হাজির হতে হয়েছে। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনে দেশে ফেরার জন্য আবেদন করলে ইমিগ্রেশন তাদের নামে 'চেকআউট মেমো' ইসু্য করছে। যাঁরা রেজিস্ট্রেশন করার সময় মালয়েশিয়া ত্যাগ করে বাংলাদেশে চলে যাওযার জন্য 'অপশন' দিয়েছিলেন তাঁদেরও দেশে ফিরতে হবে। মালয়েশিয়া সরকারের এই ঘোষণার পর কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে শ্রমিকদের অবগতির জন্য একটি জরম্নরী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। ৩১ অক্টোবরের পর থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। আরও বহু শ্রমিক দেশে ফেরার অপেৰায় রয়েছেন।
জানা গেছে, কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এখন দালাল চক্রের হাতে চলে গেছে। এ চক্র শ্রমিকদের পাসপোর্ট করে দেয়ার নাম করে এক থেকে দেড় হাজার ওই দেশীয় মুদ্রা রিংগিত হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ সরাসরি কোন শ্রমিক হাইকমিশনে এসে ১০২ রিংগিত জমা দিয়ে পাসপোর্ট নিতে পারে। কিন্তু শ্রমিকরা দালাল চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তাঁরা দালাল ছাড়া পাসপোর্ট নিতে পারছেন না।
হাইকিমশনের এক কমকর্তা জানান, দালালদের হাত থেকে শ্রমিকদের রৰা করতে হাইকমিশনে দালাল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ শ্রমিক নিজেরা পাসপোর্টের ফরম পূরণ না করতে পারায় দালালদের সহযোগিতা নিচ্ছে। এ কারণে তাঁরা দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট নিতে আসে। বার বার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, শ্রমিকরা যেন কোন দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট না করেন। দালালরা তাঁদের কাছ থেকে যাই নেবে সেটাই শ্রমিকের ঘামের টাকা। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে পাসপোর্ট নিতে বাংলাদেশী টাকায় ২ হাজার ২৯৭ টাকা খরচ হচ্ছে। শ্রমিকদের পাসপোর্ট দিতে হাইকমিশনে প্রায় ৫৮ জনের মতো লোক নিয়োগ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আরও ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী চাওয়া হয়েছে। তাদের এ মাসেই মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা রয়েছে।
হাইকমিশনার বলেন, শ্রমিকদের যাতে কোন ভোগানত্মি পোহাতে না হয় সে জন্য হাইকমিশন এবং বাংলাদেশ সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। ছুটির দিনে মালয়েশিয়ার দূরের রাজ্যে হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী পাঠিয়ে পাসপোর্টের ফরম পূরণ করে নিয়ে আসি। পাসপোর্ট তৈরি করে পরের সপ্তাহের ছুটির দিনে শ্রমিকদের হাতে পেঁৗছে দিয়ে আসার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ থেকে কোন দালাল গ্রম্নপের সঙ্গে তার পরিচয় হয়নি। তাছাড়া এখানে যারা দালালি করে তারা সবাই তো বাঙালী। কে কবে ঢাকা থেকে এসেছে তা বলা আমার জন্য কঠিন।
অন্যদিকে শ্রমিকদের এমআরপি তৈরি করতে গত ১৫ জুন দুটি টিম কুয়ালালামপুর গেছে। শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে এমআরপি দেয়ার কাজ শুরম্ন করেছে। কিন্তু পাসপোর্ট অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতার কারণে তাঁরা দিনে ৫০ থেকে ৬০টি এমআরপি ইসু্য করতে পারছেন। অথচ তাঁরা যে দুটি প্রিন্ট মেশিন নিয়ে গেছেন তাতে প্রতিদিন ৫শ' থেকে ৬শ' পাসপোর্ট প্রিন্ট করার ৰমতা রয়েছে। হাইকমিশনার অবশ্য এমন কথার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে বলেন, ওই দুটি প্রিন্টারে সর্বোচ্চ এক শ' থেকে দেড় শ' পাসপোর্ট প্রিন্ট করা যাবে। হাতে লেখা পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার। এ সংখ্যা আরও না বাড়ালে সাড়ে তিন লাখ শ্রমিকের পাসপোর্ট ইসু্য করতে এক থেকে দেড় বছর লেগে যাবে। ততদিনে অনেক শ্রমিক আবার অবৈধ হয়ে পড়বেন।

No comments: