একুশ
না আট ফাল্গুন ও আজকের প্রেক্ষাপট
বাংলাকে
রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃতি নিতে যারা জীবন দিয়েছিলেন, তারা সবাই মুসলমান ছিলো, বাংলা
ভাষায় কথা বলতো। কিন্তু যখন ৮ ফাল্গুন, ১৩৬৮ যখন এর স্বীকৃতি পেলো, তখনই ২১
ফেব্রুয়ারী হয়ে পরা কি একটা সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র ছিলো কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
আজ! বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে তমাদ্দুন মজলিস প্রথম উদ্যোগ
গ্রহণ করে। তারপর পর্যায়ক্রমে এর সাথে সংযুক্ত হলো মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ
খান ভাষানী সহ ছাত্র-শিক্ষক। যা পর্যায়ক্রমে ৮ ফাল্গুন (২১ ফেব্রুয়ারী) তমাদ্দুন মজলিসের
শাখা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ হরতাল আহ্বান করে। সর্বদলীয়
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদও আলাদা কর্মসূচী গ্রহণ করে। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম
পরিষদের হরতাল বানচালের জন্য সরকার থেকে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। ১৪৪
ধারা ভঙ্গ করা হবে কিনা, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ৭ই ফাল্গুন (২০
ফেব্রুয়ারী) বৈঠক বসে। ১৪, নবাবপুর রোডে আওয়ামী মুসলিম লীগের অফিসে সর্বদলীয় দলীয়
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের বৈঠক আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন তমাদ্দুন
মজলিসের রাজনৈতিক ফ্রন্টের আহ্বায়ক আবুল হাশিম। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম
পরিষদের বেশিরভাগ নেতা ১৪৪ ধারা না ভাঙ্গার পক্ষে মত দেন। অলি আহাদ, মুহাম্মদ
তোহা, আব্দুল মতিন, শামসুল আলম ও গোলাম মওলা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মত দেন। তবে
উপস্থিত সদস্যদের ভোটাভুটিতে তাদের মত টেকেনি। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে ভোট পড়ে
১৮টি, বিপক্ষে ভোট ৪টি। ৮ ফাল্গুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার ছাত্র সমাবেশের
কর্মসূচী ছিল। ভোটাভুটি শেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে আব্দুল মতিন আবুল হাশিমের কাছে
একটি প্রস্তাব রাখেন। প্রস্তাব আসে, ১৪৪ ধারা ভাঙ্গা-না ভাঙ্গার বিষয়টি যেহেতু
আগামীকাল (২১ ফেব্রুয়ারী) ৮ ফাল্গুন ঘটবে, তাই আগামীকাল আমতলায় ছাত্র সমাবেশ
পর্যন্ত মূলতবি রাখা হোক এ সিদ্ধান্ত। কিন্তু গাজীউল হকের মতে, ছাত্ররা ১৪৪ ধারা
ভাঙ্গার পক্ষে অনড় ছিল এবং তমাদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর আবুল কাশেম
ভাঙ্গার পক্ষে ছিলেন। প্রফেসর আবুল কাশেম তমাদ্দুন মজলিস, ঢাবি শাখাকে এ ব্যাপারে
প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। চৌধুরী শাহাবুদ্দীন আহম্মেদকে ঢাবির আমতলার সমাবেশে
বক্তব্য প্রদানের জন্য মনোনয়ন করা হয়। ৮ ফাল্গুন (২১ ফেব্রুয়ারী) ছাত্র/ছাত্রীরা
১৪৪ ধারা ভাঙ্গে, রাষ্ট্রীয় ভাষা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুরুতেই বাংলা ভাষা দিবস ৮ ফাল্গুনের
পরিবর্তে অত্যন্ত সুকৌশলে ২১ ফেব্রুয়ারী চিহ্নিত হয়। তারপরও যারা মহান ভাষা
আন্দোলনের জন্যে আত্মাহুতি দিলেন, তারা ছিলেন মুসলমান। তাদের এ আত্মাহুতিকে কয়েকটি
প্লাড়ে ফুলের মালা দিয়ে ১৩৬৯ সালে স্মরণ করা শুরু হয়।
বাংলা মাস ও সন
অনুযায়ী দিবস পালনের সুযোগ আর থাকে না। এ দেশে বহু ভাষাভাষী বসবাস করলেও ইন্ডিয়ান
বংশোদ্ভুত উপভাষীদের সর্বশান্ত করার চক্রান্ত শুরু হয়, কারণ তারা মুসলমান! দীর্ঘ
পরিকল্পনা অনুযায়ী যখন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত দেখা
দেয়, গণহত্যা দেখে দেশপ্রেমী সেনা কর্মকর্তা মেজর জিয়া সেদিন দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা
দিলেন, আমি রিভল্ড বা বিদ্রোহ করলাম, রাষ্ট্রপতি হিসাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই উর্দূভাষী হত্যা শুরু হয়। মজলুম জননেতা মাওলানা ভাষানী
বললেন, উর্দূভাষীদের হত্যার চক্রান্তের অংশ! যারা এদেশকে স্বাধীন করতে নয়, করদ
রাজ্যে পরিণত করতে চায়, তাদেরই এ কাজ চক্রান্তের অংশ – এ হত্যা বন্ধ করো! তারপর
প্রথম ছিলো আমরা মুসলমান, তারপর বাঙালী। এখন মুসলমান শব্দ বাদ দিয়ে শুধু বাঙালী
করায় হায়েনার আক্রোশ বেড়েছে। আজ আর ৮ ফাল্গুন (২১ ফেব্রুয়ারী)-এর মত ছাত্র সমাজের মধ্যে
ঐক্য নাই। ছাত্র সমাজ নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হওয়ায় তাদের সামাজিক মর্যাদা
ক্ষুণ্ন হওয়ার পথে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণের একমাত্র
নিরাপদ স্থল, সেটিও এখন আর সে অবস্থানে নেই! ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ থেকে দেশে আর
ভোটারদের ভোটের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। নির্বাচন কমিশনের কাছে গুরুত্ব বহন করে
না। জাতির বিরুদ্ধে যে চক্রান্ত ৮ ফাল্গুন, ১৩৬৮-তে শুরু, তা আজ চূড়ান্ত পর্যায়ে
পৌঁছিয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের ঢাবির প্রশাসন ও শিক্ষকদের আচরণ দেখে মনে হয়, ঢাবির
গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এখন মেরুদন্ডহীনরা বসে আছে। তাদের কাছে দেশ কিংবা ছাত্র
সমাজের ন্যায়সঙ্গত অধিকার সম্পর্কে তাদের আর ভূমিকা নাই। এখন আমাদের হত্যা, খুন,
গুম, অপহরণ, আইনের দুঃশাসন থেকে মুক্তির নেতৃত্ব কারা দেবে? ৮ ফাল্গুন আমাদের
গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। প্রথমে প্রতিষ্ঠা করতে হবে আমরা আগে মুসলমান,
তারপর বাঙালী, তাহলে সংকট দূর হবে।
লেখকঃ সাংবাদিক ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ
মফস্বল সাংবাদিক এসোসিয়েশন
যুগ্ম আহ্বায়ক, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদ, কুষ্টিয়া জেলা
ই