http://themonthlymuktidooth.blogspot.com

Friday, November 14, 2014

সেনা স্থাপনার জন্য জমি অধিগ্রহণ না করার দাবি-টি, আই, বি



কৃষিজমি বনভূমিতে সেনানিবাস বা অন্য কোনো স্থাপনা না করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে আটটি সংগঠনতাদের মতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনা স্থাপনার জন্য প্রায় ৫০ হাজার একর ভূমি বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে এর ফলে অনেক বসতি উচ্ছেদ করতে হবে এবং প্রকৃতি পরিবেশ ধ্বংস হবে
মানবাধিকার, সুশাসন উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়া হয়ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ী স্থাপনা, কারখানা প্রতিষ্ঠা, নগরায়ণ, আবাসন প্রকল্প সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার নামে একের পর এক বসতভিটা, কৃষিজমি, বনভূমি, জলাধার বেআইনিভাবে বেহাত হচ্ছে
অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), আইন সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), নিজেরা করি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে
আইন সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের দুঃখ, দেশে প্রতিকার করার সুযোগ নেইযেখানে ন্যূনতম ন্যায়বিচারের সুযোগ নেই সেখানে কীভাবে আমরা দেশে গণতন্ত্র নিয়ে বড়াই করিআমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি
সুলতানা কামাল বলেন, রাজধানীর একটা বড় অংশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছেতাদের এই পরিধি ক্রমেই বাড়ছেআর রাষ্ট্র তাদের এই মনোভাবকে সমর্থন জুগিয়ে চলেছেসরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি এসব অন্যায়ের কোনো প্রতিকার করতে না পারেন, তাহলে দেশের ভার নেওয়ার নৈতিক অধিকার আপনাদের নেই
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে আট সংস্থার পক্ষে দেশের পাঁচটি এলাকার ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে করা অনুসন্ধানের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানতিনি বলেন, কক্সবাজারের রামুতে এক হাজার ৮০০ একর, বান্দরবানের রুমায় ৯৯৭ একর, পাবনার চাটমোহরে এক হাজার ৪০৮ একর এবং নোয়াখালীর হাতিয়া চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় সাড়ে চার হাজার একর কৃষিজমি সেনাবাহিনীকে বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছেএর ফলে কৃষিজমি বাস্তুভিটা থেকে প্রায় সাত হাজার মানুষ উচ্ছেদ হবে
রিজওয়ানা হাসান বলেন, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শৈলাট তার পাশের এলাকার এক হাজার ২০০ একর কৃষিজমি একই ব্যক্তির মালিকানাধীন চারটি কোম্পানির নামে অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা চলছেনিরীহ গ্রামবাসীর প্রায় ৮০০ বিঘা জমি এবং একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ক্যাম্পাসের জমি পুকুর ভরাট করে নিচ্ছে ওই কোম্পানির লোকজন
নোয়াখালীর দক্ষিণ হাতিয়ার ক্যারিং চর এলাকার বাসিন্দা রহিমা খাতুন উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনেতিনি বলেন, ‘ক্যারিং চরে একেক সময় একেক ডাকাতের দখল দেখেছিওই ডাকাতেরা মায়ের সামনে সন্তান, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছেএসব সহ্য করে তাঁরা সেখানে বসবাস করছেনতিনি বলেন, ‘এরপর এলাকায় সিএলপি (চর লাইভলিহুড প্রজেক্ট) আসলো তারা আমাদের জমির মাপ পরিমাণ বুঝিয়ে দিলআমরা ভাবলাম, আমাদের শান্তির দিন ফিরা আসছে২০১১ সালে এলাকায় সেনাবাহিনী আসলোতারা বলল, এলাকায় শান্তি আনতে তারা আসছেকিন্তু কিছুদিন পর দেখলাম, তারা আমাদের জমি দখল শুরু করেছেতারা বলছে, এই জমি তারা সরকারের কাছ থেকে ইজারা পেয়েছে
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে আসা আবদুর রহিম বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের এলাকার দুটি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম দখল করে জলসিড়ি নামে আবাসন প্রকল্প করছেএই জমি বাঁচাতে আমরা ২০১০ সালে আন্দোলনে নামিতখন সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের সংঘর্ষ হয়আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি, বিচার হয়নিআগে যে জমিতে ফসল ফলত, এখন সেখানে দেখবেন শুধু ধু ধু বালু
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘মূল সমস্যা আমাদের কোনো প্রতিরক্ষা নীতি নেইআমরা সেনাবাহিনীর হাতে আলাউদ্দিনের চেরাগ তুলে দিয়েছিতারা যা চায়, তাই তাদের দিতে হবে
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত শিক্ষা স্বাস্থ্যে সরকার বাজেট বরাদ্দ দিতে চায় নাঅথচ প্রতিরক্ষা বাজেটে যা চাওয়া হয়, তাই দেওয়া হয় নিয়ে প্রশ্ন করারও সুযোগ থাকে নাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থে অবশ্যই সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের অপরিহার্যতা রয়েছেএই মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, কিন্তু তারা কি নিজেদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে, না জনগণের নিরাপত্তা বিধান করছে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে
নিজেরা করির প্রধান নির্বাহী খুশী কবির বলেন, ‘দেশের দুজন সাবেক রাষ্ট্রপতিকে সেনাসদস্যরা হত্যা করেছেতারা বারে বারে গণতন্ত্র হত্যা করেছেআর তারা আমাদের সুরক্ষার নামে জনগণের জমি, বনভূমি জলাভূমি দখল করছে
ব্লাস্টের পক্ষে সারা হোসেন বলেন, সেনাবাহিনী জমি দখল করলেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তাদের সহায়তা করেছে তিনি গণমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন, ভুক্তভোগীরা যখন কথা বলছিলেন, তখন বেশির ভাগ টিভি ক্যামেরা বন্ধ করে রাখা হয়েছেতিনি সাধারণ ভুক্তভোগীদের কথা বেশি করে প্রচার করার আহ্বান জানান
বিষয়ে সেনাবাহিনীর বক্তব্য জানতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও দায়িত্বশীল কেউ কিছু বলতে রাজি হননি

 সূত্র   : টি, আই, বি

No comments: