Bangladeshi Opposition Journalist & former General Secretary of Bangladesh National Press Club
আমি রাজনীতির সাথে জড়িত হয়েছি ২০০৭ সাল থেকে। আমার মত একজন সাধারন ব্যক্তি সম্পর্কেও খোঁজখবর রাখেন এমন বোদ্ধা পাঠক প্রতিবাদ করে বলে উঠতে পারেন, আপনি সত্য বলছেন না কারন বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান হয়ে ২০০১ সালের নভেম্বরে আপনি সরকারে যোগদান করেছেন। আমি সবিনয়ে বলবো যে সরকারে টেকনোক্রেট হিসেবেই যোগ দিয়েছিলাম। আমার কাজ-কর্ম রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক গন্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলীয় কাজ-কর্মে আমাকে একেবারেই সম্পৃক্ত করেননি। এমনকি কোন রাজনৈতিক বিষয়ে আমার কাছ থেকে কোনদিন কোন মতামত চাননি। ২০০৭ সালে জেনারেল মইনের নেতৃত্বে এক বিভ্রান্ত সেনাবাহিনী শত্রু দেশের কাছে স্বাধীনতা বন্ধক দিলে তারই প্রতিবাদে আমার রাজনীতিতে আগমন। আমার লেখক সত্তার জন্মও সেই সময়েই।
আমি শহীদ জিয়ার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ তত্ত্বের একজন অনুসারী। রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকে কখনও সেই আদর্শ অনুসরণে কোনরকম কপটতা কিংবা সুবিধাবাদিতার আশ্রয় গ্রহন করিনি। সাময়িক এবং সস্তা কোন জনপ্রিয় অভিমতকে গ্রহন করিনি। একজন বাঙালী মুসলমানের বিশ্বাস, ঐতিহ্য এবং আদর্শকে ধারন করে ¯্রােতের বিপরীতে অনেক সময় অবস্থান নিয়েছি। এক এগারোর সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করে সাময়িক জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়েছিল। বিএনপির নেতৃবৃন্দের মধ্যে অধিকাংশই তখন সেনা সমর্থিত সরকারের কৃপা ভিক্ষার জন্যে দোরে দোরে ঘুরেছেন। অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। তথাকথিত ‘আয়রন লেডি’ শেখ হাসিনাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন। সেই বৈরী সময়েও জেনারেল মইনের জাতির পিতা তত্বের বিরোধিতা করে নয়া দিগন্ত পত্রিকায় আমি লিখেছিলাম, দেশে-বিদেশে জাতির পিতা ফেব্রুয়ারী,২০০৭)। শেখ মুজিবকে আমাদের জাতির পিতা মানতে আমি অস্বীকার করেছিলাম এবং এখনও করি।
ভারত-মার্কিন-ইসরায়েলী লবির সঙ্গে ষড়যন্ত্রক্রমে এক এগারোর সেনা সমর্থিত সরকার শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার পর থেকেই দিল্লির দালাল সকারের চরিত্র আমার দেশ পত্রিকায় অব্যাহতভাবে উন্মোচিত করে গেছি। ইসলাম বিদ্বেষী সেক্যুলার সরকারের দুর্নীতির খবর ছেপেছি তাদের ক্ষমতা লাভের এক বছরে মধ্যেই। বিএনপির অনেক বিজ্ঞ নেতা আমাকে হঠকারী বলে গালমন্দ করেছে। বলেছে সরকারের প্রথম বছরেই এত কথা পত্রিকায় লেখার দরকার কী? এগুলো বাড়াবাড়ি। সবার আগে উচ্চ আদালতের কদাকার এবং দলবাজ চেহারা জাতির সামনে তুলে ধরেছি। আদালত অবমাননার মামলা হলে বিএনপির তাবৎ আইনজীবী এবং নীতিনির্ধারকবৃন্দ ক্ষমা চাওয়ার জন্য আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করলেও নীতির প্রশ্নে অবিচল থেকেছি। পুলিশ হেফাজতে অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করেও আপীল বিভাগে দাঁড়িয়ে বলেছি, ক্ষমা চাইব না, যা লিখেছি সত্য লিখেছি।
২০১২ সালে স্কাইপ কেলেংকারীর তথ্য হাতে এলে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হওয়ার পর প্রকাশ করতে এতটুকু দ্বিধা করিনি। সরকার, বিচারবিভাগ এবং দিল্লির হুমকির পরওয়া করিনি। ২০১৩ সালে দেশি-বিদেশি মিডিয়া সম্মিলিতভাবে দিল্লির প্রকল্প, গনজাগরন মঞ্চকে গৌরবান্বিত করলেও তার বিরুদ্ধে একা আমার দেশ লড়াই করেছে। ইসলাম বিদ্বেষী শহুরে মধ্যবিত্তদের বিরাগভাজন হব জেনেও পত্রিকার শিরোনাম করেছি, শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি। বিএনপির সুবিধাবাদী নেতারা আবারও অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তারা তখন বেগম খালেদা জিয়াকে শাহবাগে নেয়ার জন্য পায়তারা করছেন। এদের মধ্যে বদ্ধমূল ধারনা জন্মেছে যে ভারতের কৃপা ব্যতীত ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়। শহীদ জিয়ার আদর্শকে জলাঞ্জলি দেয়ার জন্য সব এক পায়ে খাড়া। তাদের কাছে মনে হলো গনজাগরনে যোগদান করলে দিল্লি খুশী হবে। সেক্যূলার বিএনপির ধারনা দলের মধ্যে অবয়ব নিতে আরম্ভ করেছে।
জেল থেকে মুক্তি পেলাম ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ভুয়া নির্বাচন হয়ে গেছে এবং বিএনপির ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের আন্দোলন ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে ব্যর্থ হয়েছে। দ্বিতীয় দফার চার বছরের জেল জীবনে বিএনপি এবং জামাতের অসংখ্য নেতা-কর্মীদের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনার সুযোগ পেয়েছি। বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে বিএনপির অধিকাংশ শীর্ষ নেতাই ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করার জন্য বেগম জিয়াকে দোষারোপ করছেন। বেগম জিয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক বিবেচনা করে আমি তাদের সাথে অনবরত তর্ক করেছি। এবং পরিনামে অধিকতর বিরাগভাজন হয়েছি। বিএনপির ভারত অভিমুখি যাত্রার বিষয়টি জেলে বসেই টের পাচ্ছিলাম। কাশিমপুর থেকে বেরিয়ে জানলাম দলের ভিতরকার ভারতপন্থী গোষ্ঠী শীর্ষ নেতৃত্বকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে ভারতের বিষয়ে আমার অনড় অবস্থান তাদের অস্বস্তিতে ফেলছে। এমনকি বেগম খালেদা জিয়াও ভারত এবং ইসলাম প্রশ্নে আমাকে আকারে-ইঙ্গিতে সংযত হতে পরামর্শ দিলেন। আমার কারনে নাকি ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতি বিরক্ত হচ্ছে। আমি বেগম জিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে দিল্লি কখনও শেখ হাসিনার পরিবর্তে তাকে মসনদে বসাবে না। শেখ পরিবারের সাথে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং দিল্লির এস্টাবলিশমেন্টের সেই পাকিস্তানী আমল থেকে গভীর সম্পর্ক। বিজেপি কিংবা কংগ্রেস, দিল্লিতে যারাই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, আওয়ামী লীগ এবং শেখ পরিবারই তাদের মিত্র। একবিংশ শতকের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমেরিকাও ভারতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কোন দলকে সমর্থন করবে না। তাছাড়া, ইসলাম বিদ্বেষের মাপকাঠিতে শেখ হাসিনা, হিন্দুত্ববাদী ভারত এবং জায়নবাদী শ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠী একে অপরের পরিপূরক। বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করেই বিএনপিকে লড়াই করে যেতে হবে। বলা বাহুল্য, বিএনপির নীতিনির্ধারনী ফোরামে আমার রাজনৈতিক আদর্শ ইউটোপিয়ান এবং হঠকারী বিবেচিত হলো। এক সময় লক্ষ্য করলাম, দলটির ইন্টেলেকচুয়াল ফোরাম থেকে আমাকে বাদ দেয়া হচ্ছে। এক এগারোর সুবিধাবাদী এবং ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবীদের আগমন ঘটলো চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে। এই নব্য বিএনপি বুদ্ধিজীবীদের রাজনৈতিক নেতৃত্বে থাকলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এই বুদ্ধিজীবীরা সময়ের অনেক আগেই ভারতের পরামর্শ অনুযায়ী বিএনপিকে একতরফা নির্বাচনের ট্রেনে তুলে ফেলেছেন। বিএনপি নেতৃত্ব আমার পরামর্শে কান দিচ্ছে না জেনেও তাদেরকে জিয়াউর রহমানের আদর্শে ফেরানোর সর্বাত্বক চেষ্টা করেছি। সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির মধ্যকার ভারতীয় দালালগোষ্ঠী শেখ হাসিনার অবৈধ শাসনামলকে বৈধতা দেয়ার নীল নকশা তৈরী করে ততদিনে তার বাস্তবায়ন শুরু করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন ভুল ছিল শ্লোগান তুলে বেগম জিয়াকেও মানসিকভাবে দূর্বল করে ফেলেছিল একই চিহ্নিত গোষ্ঠী। এই প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার একটি ঘটনার উল্লেখ করছি।
জেল থেকে বের হওযার পর নতুন এবং পুরনো ১২৫ মামলার হাজিরা দিতে আমাকে সারা দেশ চষে বেড়াতে হত। সেরকম এক হাজিরায় দিনাজপুর গেছি। আদালতে দিনাজপুরের কোন এক আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। সজ্জন মানুষ, এলাকার দলের নেতা-কর্মীদের খোঁজ-খবর রাখেন। রাজনীতি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলে উঠলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে বেগম জিয়া পর্বতসম ভুল করেছেন, ২০১৮ সালেও বর্জন করলে দল থাকবে না। আমি সাধ্যমত চেষ্টা করলাম শেখ হাসিনাকে বৈধতা না দেয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তাকে বোঝাতে । কোন কাজ হলো না। তিনি জোর দিয়ে বললেন যে বিএনপির মহাসচিবসহ সকল সম্ভাব্য প্রার্থীরাই নাকি নির্বাচনের পক্ষে। সেদিনই নিশ্চিৎ হয়ে গেলাম যে বিএনপিতে আত্মঘাতী রাজনীতির পচন আরোগ্যের উর্ধ্বে চলে গেছে। আদর্শচ্যুত, সুবিধাবাদী গোষ্ঠী দলের Rank and File কে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছে। আমি জানি না সেই আখতারুজ্জামান তামাশার নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন কিনা কিংবা পেয়ে থাকলে তার জামানত রক্ষা পেয়েছে কিনা। সে খবর জানারও আমার কোন আগ্রহ নেই। কেবল ভাবি আখতারুজ্জামানের মত পুরনো এবং তৃণমূল রাজনীতিবিদদের বিভ্রান্তি দল এবং দেশের বড় ক্ষতি করে দিল। এক ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট শাসকের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহনের ভুল কৌশলের চোরাবালিতে একা আখতারুজ্জামান পা দেন নি, আমার ধারনা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ একই কাজ করেছেন। এমনকি শুধু বিএনপি নয়, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বও একই বোকার স্বর্গে বাস করেছেন। নির্বাচন করতেই হবে, এই উন্মাদনায় দলের নিবন্ধন না থাকলেও তারা ধানের শীষ নিয়ে কাড়াকাড়ি করেছেন। দিল্লি এবং শেখ হাসিনা এবং জামাতে ইসলামীকে যে একটি আসনও দিতে পারে না এই সহজ সত্য দলের নেতৃবৃন্দ দেখতে পাননি। এই কৌশলকে কি নামে ডাকবো. অবিমৃষ্যকারিতা, সুবিধাবাদিতা নাকি স্রেফ নির্বুদ্ধিতা?
বিএনপি নেতৃত্বের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তাদের নেতা ভাড়া করে আনার মধ্য দিয়েও প্রমানিত হয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সাবেক আওয়ামী লীগারদের জোটে ভিড়িয়ে ড: কামালের নেতৃত্বে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছিলেন। ড: কামাল, কাদের সিদ্দিকী, আ স ম রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, ইত্যাদিদের কেন প্রয়োজন হলো তার একটা ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করেছি। ইন্দো-মার্কিন বলয়কে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে বিএনপি যথাসম্ভব তাদের কল্পিত ইসলামী লেবাস ত্যাগ করবার চেষ্টা করেছে। এক সময়ের আওয়ামী নেতাদের দলে ভেড়ানোর উদ্যোগ বর্ণিত কৌশলেরর অংশ বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। দলের মহাসচিবের এই উদ্যোগে বেগম জিয়া এবং তারেক রহমানের যে সম্পূর্ন সায় ছিল তাতে সন্দেহ পোষন করারও কোন কারণ নেই। মজার কথা হলো বিএনপির নীতিনির্ধারনী মহলে ব্যক্তিজীবনে সেক্যুলারদেরই একচেটিয়া প্রাধান্য। দূর্ভাগ্যবশত: তাদের গায়ে ইসলামী লেবাস লেগে যাওয়ার কারন হলো দলের প্রতিষ্ঠাতার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শ এবং জামাতে ইসলামীর সাথে নির্বাচনী মৈত্রী। আশ্চর্য্যরে বিষয় হল্ োজামাতে ইসলামীকে ত্যাগ না কলেও বিএনপি নেতৃত্ব এবার জিয়াউর রহমানকে পরিত্যাগ করতে দ্বিধা করেনি। নির্বাচনের আগে কিংবা পরে ড: কামালের মুখে জিয়া নামটি একবারের জন্যও উচ্চারিত হয়নি। মির্জা ফখরুলকে পাশে বসিয়ে তিনি সারাক্ষন বাংলাদেশের প্রথম গনতন্ত্র হত্যাকারী শেখ মুজিবের বন্দনা করে গেছেন। প্রবাসে বসে শুনেছি যে নির্বাচনী ইশতেহারে বিসমিল্লাহির রাহমানুর রাহীম রাখা নিয়ে বিএনপি নীতিনির্ধারকদের মধ্যে যথেষ্ট দোদূল্যমানতা ছিল। আওয়ামী লীগের ইসলাম বিদ্বেষ সর্বজনবিদিত এবং প্রাচীন। শেখ হাসিনা অবলীলাক্রমে বাংলাদেশের সংবিধান থেকে আল্লাহর প্রতি আস্থা এবং পূর্ন বিশ্বাসের ঘোষনা প্রত্যাহার করতে পারেন। তাই বলে তারই অনুকরনে বিএনপি নেতৃবৃন্দ আল্লাহর নাম নিয়ে দ্বিধায় ভুগবেন এটা মেনে নেয়া কঠিন।
বিএনপির রাজনীতির দেউলিয়াত্ব নির্বাচনের প্রাক্কালে ভারতীয় পত্রিকায় দেয়া মহাসচিব মির্জা ফখরুলের ইন্টারভিউ থেকেও দৃশ্যমান। তিনি অবলীলায় স্বীকার করেছেন যে বিএনপি ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সাধারন সম্পাদকের সাথে ব্যাংককে বৈঠকের আপ্রান চেষ্টা করেও অন্য পক্ষের অনীহার কারনে ব্যর্থ হয়েছে। ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের লোকজনও নাকি বিএনপিকে পাত্তা দিতে চায় না। এর আগে তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী জনৈক হুমায়ুন কবির, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু এবং ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু অযাচিত ভাবে ভারতে গিয়ে জিয়াউর রহমান ও বেগম জিয়ার রাজনীতির প্রকাশ্য সমালোচনা করে দিল্লির মনোরঞ্জনের আপ্রান চেষ্টা করেছেন। আদর্শচ্যূত এবং আত্মসম্মানহীন একটি রাজনৈতিক দল দেশে এবং বিদেশে কোথাও যে মর্যাদা পাবে না এটাই প্রত্যাশিত।
অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী বিএনপি এবং গনফোরামকে শেখ হাসিনা সর্বমোট সাতটি আসনের ভিক্ষা দিয়েছেন। ভিক্ষা প্রাপ্তদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আছেন। তবে তাকে ঠাকুরগাঁও এর নিজস্ব আসন না দিয়ে বগুড়ার বেগম জিয়ার আসন থেকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়েছে। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিলে তার পরিনতি সম্পর্কে দেশের জনগনকে আমি একাধিকবার সতর্ক করে বলেছিলাম যে, বিরোধী দল কটি আসন পাবে এবং কারা বিজয়ী হবে সেটি শেখ হাসিনা এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ মিলে নির্ধারন করবে। আমার আশংকা সত্যে পরিনত হয়েছে। বিরোধী দলের ৭ আসন প্রাপ্তি প্রসঙ্গে পুরনো দুটি তথ্যের কথা মনে পড়লো। বাংলাদেশে তামাশার নির্বাচনের সূচনা হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। বিএনপি দ্বারা বৈধতাপ্রাপ্ত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা সেই সময় বিরোধী দলকে একইভাবে ৭টি আসন দিয়ে বাকি ২৯৩ আসনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী দেখিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ড: কামালও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে এক আসনে জিতেছিলেন। শেখ মুজিবের কন্যা পিতার আদর্শ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। এখানে ৭ আসন সংখ্যাটি কাকতালীয় নয়। এমন ভয়ানক ফ্যাসিজম মোকাবেলার সক্ষমতা বিএনপি এবং জামাতের বর্তমান নেতৃত্বের আছে কিনা সেই প্রশ্ন জনমনে উত্থাপিত হচ্ছে। দ্বিতীয় ঘটনা ১৯৯১ সালের। নির্বাচনের আগে ভারতীয় পত্রিকায় প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টি দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে। বিএনপি সম্পর্কে তার মন্তব্য ছিল দলটি সর্বোচ্চ দশ আসন পেতে পারে। আমার ধারনা ঘটনাটি শেখ হাসিনার স্মরণে ছিল। তিনি কথা রেখেছেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনী তামাশায় জাতীয় পার্টি ২২ আসন পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছে। আর ড: কামালকে ভাড়া করেও বিএনপি দশ আসন পায়নি। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতের কাছে আমাদের স্বাাধীনতা বিসর্জনের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিল সেটি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে বিএনপি-জামাতের সহায়তাক্রমে শেখ হাসিনা সম্পন্ন করলেন। পলাশীর ট্রাজেডির মত করেই দেশপ্রেমিকের দাবীদার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নিশ্চল দাঁড়িয়ে থেকে পরাধীনতার দলিলে সিলমোহর লাগাতে দেখলো। বাংলা এবং ভারতের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে ১৯০ বছর লেগেছিল। আমাদের কত বছর লাগবে সেটি দেখার জন্য হয়ত পৃথিবীতে থাকব না। তবু স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন নিয়েই জীবন কাটাতে চাই। বাংলাদেশের জনগনের উদ্দেশ্যে বহুবার বলা কথা আবারও বলছি। স্বাধীনতা কিংবা অধিকার কেউ স্বেচ্ছায় দেয় না। অনেক লড়াই করে, বহু প্রানের বিনিময়ে ওটা অর্জন করতে হয়। গোলামী যেন দেশবাসীর অভ্যাসে পরিনত না হয় মহান আল্লাহতালার কাছে সেই প্রার্থনাই করছি।।
No comments:
Post a Comment