http://themonthlymuktidooth.blogspot.com

Saturday, June 22, 2019

কাজী আরেফ আহমেদকে অচেনা বলে কটাক্ষের প্রতিবাদ-- Jatiya Samajtantrik Dal Jasod

আজ ২২ জুন ২০১৯, শনিবার প্রকাশিত বাংলাদেশ প্রতিদিনের ১ম পৃষ্ঠায় কলামে পীর হাবিবুর রহমানের ইতিহাসের মুখোামুখি আমির হোসেন আমুর জবানীতে “রাজ্জাক তো সিরাজের বিরোধী করেছিলেন, অচেনা আরেফকে নিয়ে নিউক্লিয়াস হয় কী করে?” শীর্ষক প্রতিবেদনটির প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য হলো: 
বাংলাদেশ প্রতিদিনে আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর সাক্ষাৎকারে জাতীয় বীর বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম-স্বাধীকার সংগ্রাম-স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফকে অচেনা কাজী আরেফ বলে কটাক্ষ করার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা করছি। আমরা মনে করি, যাদের ইতিহাসে গৌরবোজ্জল অবস্থান নেই তাদের কাছে কাজী আরেফ অচেনা। আজকের প্রধানমন্ত্রী ৬০ দশকে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের অন্যতম নেত্রী ও ৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের নির্বাচিত ভিপি শেখ হাসিনা খুব ভাল করেই কাজী আরেফকে চিনতেন, তার ভূমিকা সম্পর্কে জানতেন। তাই ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কাজী আরেফ আহমেদকে হত্যার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কাজী আরেফ আহমেদের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে সমাধিস্থ করার নির্দেশ দেন। 

কাজী আরেফ আহমেদ ১৯৬০ সালে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সে বছরই তিনি পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষণা করলে এ সময় ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ সর্বপ্রথম ৬ দফার সমর্থনে ঢাকায় মিছিল বের করেন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। 

বিএলএফ/মুজিব বাহিনীর দক্ষিণ অঞ্চলীয় কমান্ডের ব্যারাকপুরস্থ হেড কোয়ার্টার থেকে অধিনায়ক অধিনায়ক তোফায়েল আহমেদ, উপ অধিনায়ক নুর আলম জিকুর সাথে মিলে কাজী আরেফ আহমেদ হাজার হাজার গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে পরিচালনা করেছেন এবং চার অঞ্চলের অধিনায়ক ও উপ অধিনায়কদের সাথে সমন্বয় করেছেন। স্বাধীকার-স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধে প্রকাশ্যে সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে কাজী আরেফ আহমেদ যে বীরত্বপূর্ণ দুঃসাহসিক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। ৬০ দশকের ছাত্রলীগের হাতে গোনা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার মধ্যে অন্যতম কাজী আরেফ আহমেদকে অচেনা বলা বা না চেনার ভান করা সেই সময়ে কোনো ছাত্রলীগ নেতা বা কর্মীর জ্ঞানপাপ ও মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। আর সত্যি সত্যি না চিনে থাকলে বলতে হয়, তিনি আর যাইহোক মন দিয়ে ঐ সময় ছাত্রলীগ করেননি বা ছাত্রলীগে থাকলেও মনে মনে পাকিস্তানপন্থী ছিলেন- যার কাছে শুধু কাজী আরেফ আহমেদই নয় পুরো ছাত্রলীগই অচেনা ছিল। 

কাজী আরেফ আহমেদ বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে চির উজ্জ্বল ধ্রুবতারা। বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম-স্বাধীকার সংগ্রাম-স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধে তার কিংবদন্তীতুল্য অবদান অস্বীকার করা মানেই জাতির সবচাইতে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকেই অস্বীকার করা। স্বাধীন বাংলাদেশেও জাসদ গঠন করে সমাজবিপ্লবের লক্ষ্যে বিপ্লবী সংগ্রাম পরিছারনা করা, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির দ্বন্দ্বকে রাজনীতির প্রধান দ্বন্দ্ব হিসাবে নির্ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য ও সামরিক শাসন-সাম্প্রদায়িকতা-ধর্মভিত্তি
ক রাজনীতির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-অসাম্প্রদায়িকতা-ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা ধারন করে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সংগ্রাামের মৌলিক রাজনৈতিক তত্ত্ব ও রাজনৈতিক পথ বিনির্মাণ করেন। তার এই রাজনৈতিক তত্ত্ব ও লাইনের ভিত্তিতেই ১৯৮০ সালে জিয়ার বিরুদ্ধে ১০ দলীয় জোট, ১৯৮৩ সালে এরশাদের বিরুদ্ধে ১৫ দলীয় জোট, ১৯৯২ সালে ঐতিহাসিক গণ আদালত ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামাত নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন গড়ে উঠে। এসব কিছু জানার পরও তার সমসাময়িককালের একজন রাজনীতিক কর্তৃক তার প্রতি কটাক্ষ অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ধরনের নিম্ম রুচি ও ইতিহাসকে অস্বীকার করার অপচেষ্টা স্বাধীনতা বিরোধীদের খুশি করবে মাত্র। 
বার্তা প্রেরক 

আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম 
দফতর সম্পাদক 

No comments: