প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ
তারিখঃ ১৬/০৮/২০২০ ইং , রোজ,রবিবার।
উপজাতি জঙ্গি সন্ত্রাসী কর্তৃক খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলাস্থ বাবুছড়ায় গভীররাতে ঘুমন্ত পরিবারের উপর পরিকল্পিত হামলা ও হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলায় একযোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার, বাবুছড়া সোনা মিয়া টিলা নামক এলাকার পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের অন্যতম নেতা,আব্দুল মালেকের পরিবারের উপর গতকাল ১৫ ই আগস্ট গভীর রাতে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা ন্যাকারজনক হামলা চালায়।
উক্ত হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে আজ সকালে একযোগে প্রতীবাদ সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্রগ্রাম নাগরিক পরিষদ।সকাল ১১ টায় স্ব স্ব জেলা সদরে উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়ে।
রাঙ্গামাটি সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ শাব্বির আহম্মেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর কবির,আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক মোঃ সোলায়মান, নাগরিক পরিষদের নেতা মোঃ নাদিরুজ্জামান, কাজী মোঃ জালোয়া,মোঃ হাবিব আজম হাবিব,মোঃ নজরুল ইসলাম, হুমায়ন কবির পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা পরিষদের নেত্রী মোর্শেদা আক্তার, মনিকা আক্তার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের ছাত্র নেতা মোঃ নাজিম আল হাসান, তাজুল ইসলাম তাজ, মামুনুর রশীদ মামুন, আরিফুল হক, সাইফুল ইসলাম, মাঈনুদ্দীন, রাজু,মোঃ রকি, আনোয়ার হোসেন জনি, মোঃ শাকিল, মোঃ আতাউর, মোঃ জিল্লুর রহমান, মোঃ খলিল প্রমুখ।
খাগড়াছড়িতে প্রতিবাদ সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জি-আব্দুল মজিদের সভাপতিত্বে ও ছাত্রনেতা আসাদুল্লাহ আসাদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যক্ষ আবু তাহের,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম মাসুম রানা সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুজ্জামান ডালিম,কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ইঞ্জি-মুহা:লোকমান হোসাইন, যুব বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মাসুদ, সহ প্রচার সম্পাদক এড আফসার রনি,দীঘিনালার সমন্বয়ক তাহেরুল ইসলাম সোহাগ, সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
বান্দরবানে প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি কাজী মজিবুর রহমান, সভাপতিত্ব করেন জেলা শাঁখার সাধারণ সম্পাদক নাছির উল আলম,উপস্থিত ছিলেন, মিজানুর রহমান আকন্দ সহ পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের বান্দরবান জেলা শাখার অন্যান নেতা কর্মীরা।
উক্ত প্রতিবাদ সভায় বক্তারা একযোগে বলেন, ইউপিডিএফ নামক পাহাড়ি আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী জঙ্গি সংগঠন কর্তৃক দীঘিনালার উক্ত সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি।ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা আব্দুল মালেককে হত্যার উদ্দেশ্যে নিজ বসতবাড়িতে বাহির হতে এলোপাথাড়ি ২০ থেকে ২৫ রাউন্ড ব্রাশ ফায়ার করে তারা অন্ধকারে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।আব্দুল মালেককে পরিকল্পিত হত্যার উদ্দেশ্যে উক্ত হামলা করা হয়েছে,মালেক ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে গেলেও তার সহধর্মিণী মোরশেদা বেগম (৪০বছর) হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাক্তকভাবে আহত হন তাঁর ছোট ছেলে মো: আহাদ(১১ বছর)।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ উক্ত ন্যাকারজনক সন্ত্রাসী জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।সেই সাথে মালেকের সহধর্মিণীর পরলোকগমনে গভীর শোঁক প্রকাশ করছে।
সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, ১৯৭৯,১৯৮১ এবং ১৯৮৫ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী সংগঠন শান্তি বাহিনীর ভয়ানক অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর একান্ত আন্তরিক সহযোগিতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক এলাকার নিরীহ বাঙ্গালীদের নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষে বাঙ্গালীদের নিজেদের ঝুঁকিপূর্ণ আবাসভূমি থেকে তাদের সরিয়ে নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পের আশেপাশে সেসব নিরীহ বাঙ্গালীদের সাময়িকভাবে আবাসের ব্যাবস্থা করা হয়েছিল,যার নাম দেয়া হয়েছিল গুচ্ছগ্রাম।কিন্তু দীর্ঘকাল অতিক্রম হলেও অসহায় এসব বাঙ্গালীরা তাদের নিজের বসত বিটায় ফিরে যেতে পারেনি।
গুচ্ছগ্রাম সহ সকল সমস্যা সমাধানে কল্পে ও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষে ১৯৯৭ সালে বর্তমান সরকারের সাথে শান্তি বাহিনীর "শান্তি চুক্তি" নামক একটি চুক্তি হয়।আমরা ভেবেছিলাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে প্রকৃত শান্তি ফিরে আসবে,কিন্তু শান্তি আসবে তো দূরের কথা শান্তিচুক্তির কুফল হিসেবে একটা সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে আজ পাঁচ পাঁচটি সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্ম নিয়েছে।বর্তমানে এসব সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে সবচেয়ে বড় বিপদে আছে পাহাড়ের সাধারন মানুষ।তাহলে এই চুক্তি করে সরকার তথা দেশের কি ফায়দা হল?
শান্তি চুক্তি পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের গুচ্ছগ্রামের বাঙ্গালীদের নিজ ভুমিতে ফিরিয়ে আনার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সেসব নিরীহ বাঙ্গালীদের(গুচ্ছ গ্রামের)নিজেদের ভূমি উপজাতীয়দের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে বেদখল হয়ে আছে।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সুপারিশক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ ও খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনকে সোনামিয়া টিলা সহ বাঙ্গালীদের উচ্ছেদ ও বেদখল হওয়া জমি পুনরুদ্ধারে আইনী ও প্রশাসনিক সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ বাস্তবায়িত হলে আজকে সন্ত্রাসীরা দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি আব্দুল মালেকের বসতঘরে হামলা করার সাহস পেত না।যে ব্যক্তিটি দীর্ঘদিন যাবৎ বাঙালির ভূমি রক্ষার আন্দোলন করে আসছে আজ তারই বসতঘর সন্ত্রাসীদের হামলায় বিপর্যস্ত, স্ত্রী নিহত, সন্তান গুলিবিদ্ধ।এই হামলা শুধুমাত্র আব্দুল মালেকের পরিবারের উপর নয় সমগ্র পার্বত্যবাসী বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপর হয়েছে বলে আমরা অনুভব করি। দুর্ভাগ্যজনক হল,খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ বা খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশের ন্যূনতম বাস্তবায়ন করে নাই তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে অমান্য করেছেন।
বক্ত্যারা বলেন,এই কারনে নিজেদের ভূমি ছেড়ে দীর্ঘ বছর ধরে এসব নিরীহ বাঙ্গালীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।আব্দুল মালেক দীঘিনালা উপজেলার সোনামিয়া টিলা নামক এমন অসহায় ৮১২ পরিবারের বেদখল হওয়া সাধারন বাঙ্গালীর ভূমি রক্ষার জন্য গঠিত কমিটির দীর্ঘদিন ধরে সভাপতির দায়িত্বপালন করছেন।গুচ্ছগ্রামের বাঙ্গালীদের ভূমি রক্ষায় দীর্ঘকাল ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।তাই তাকে উপজাতি সন্ত্রাসীরা হত্যা করতে চায়।বাঙ্গালীদের ভূমি উপজাতীয়দের দ্বারা দখল স্থায়ী করার লক্ষেই মূলত আব্দুল মালেকের পরিবারের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে এই পরিকল্পিত হামলা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে সংগঠনের নেতা কর্মীরা সরকারের নিকট কিছু দাবী দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তুলে ধরেন-
১)আব্দুল মালেকের পরিবারের উপর হামলার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাবস্থা করতে হবে এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২)সোনামিয়া টিলা সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের উচ্ছেদ ও বেদখল হওয়া জমি শীঘ্রই পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে হবে।
৩)পার্বত্য এলাকার সাধারন জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে অধিক সংখ্যক সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে।
৪)পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সকল আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনকে (UPDF,JSS)কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
৫) যেহেতু শান্তিচুক্তির ফলে পাহাড়ে শান্তিচুক্তির মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি সেহেতু শীঘ্রই এই সংবিধান বিরোধী শান্তিচুক্তি বাতিল করতে হবে।
৬)পাহাড়ের চল্লিশ হাজার নিরীহ ও নিরপরাধ বাঙ্গালীর প্রত্যেকটির নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত পূর্বক নিশ্চিত করতে হবে।
রবিবার সকালে তিন জেলায় একযোগে দুই ঘন্টাব্যাপি উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশে নাগরিক পরিষদের বিভিন্ন স্থরের নেতা কর্মী সহ অসংখ্য সাধারন জনগণ এতে অংশগ্রহণ করেন।
বার্তা প্রেরকঃ
ইঞ্জিঃশাহাদাৎ ফরাজী সাকিব
সদস্য,স্টায়ারিং কমিটি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।
No comments:
Post a Comment