পাহাড়ে আদিবাসী বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে মতাদর্শগত বিরোধ, বিভেদ এমনকি বিরোধের চূড়ান্ত পর্যায় পারস্পরিক হানাহানি থাকলেও সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে কোনো পক্ষই মেনে নিতে পারেনি। বরং তারা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পাস করা সংবিধান সংশোধনীকে প্রত্যাখান করেছে। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং আদিবাসী সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এই মতামত ব্যক্ত করেন।
খাগড়াছড়ির বাসিন্দা সমাজসেবক ধীমান খীসা বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সকল সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীকে বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একজন বাঙালি যেমন চাকমা, মারমা বা ত্রিপুরা হতে পারে না, তেমনি একজন আদিবাসী কখনো বাঙালি হতে পারে না।’ তিনি ৭২ সালের সংবিধানের কথা স্মরণ করে দিয়ে বলেন, সে সময়েও আদিবাসীদের বাঙালি হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এর ফল কি হয়েছিল তা সবার জানা। তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসীদের সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা হয়েছে এবং তাঁদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। মারমা উন্নয়ন সংসদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাথোয়াইপ্রু মারমা বলেন, ‘কার্যধারা ২ (২) সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে কমিটি আদিবাসী প্রশ্নে মনগড়া সুপারিশ করেছে। কমিটি আদিবাসী প্রশ্নে কারও মতামত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। সে জন্য কমিটির ইচ্ছেমাফিক সুপারিশ করেছে। এই পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসীদের বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, ধর্মীয় ও নাগরিকত্ব প্রশ্নে আদিবাসীরা এখন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছে। সংবিধানে এখন আদিবাসীদের অস্বীকার করে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার কোনো সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি।’
জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সুধাসিন্ধু খীসা বলেন, ‘আদিবাসীদের সাংবিধানিকভাবে বাঙালি বানানো হয়েছে। সংবিধানের ৩৮ নম্বর ধারা সংশোধনী খুবই আপত্তিকর ও সন্দেহজনক।’ তিনি বলেন, ‘এ ধারায় পাহাড়ের যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রাম সরকার বন্ধ করে দিতে পারবে। এটা মানুষের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।’ ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফন্টের (ইউপিডিএফ) তথ্য ও প্রচার শাখার মুখপত্র নিরন চাকমা বলেন, ‘সংখ্যালঘু জাতিসত্তা কি নামে পরিচিত হবে তা নিজেরাই নির্ধারণ করবে। চাপিয়ে দিয়ে কোনো পরিচিতি কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না
No comments:
Post a Comment