প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক/প্রকাশক/মুদ্রাকর : ইশফাকুল মজিদ সম্পাদনা নির্বাহী /প্রকাশক : মামুনুল মজিদ lপ্রতিষ্ঠা:১৯৯৩(মার্চ),ডিএ:৬১২৫ lসম্পাদনা ঠিকানা : ৩৮ এনায়েতগঞ্জ আবু আর্ট প্রেস পিলখানা ১ নং গেট,লালবাগ, ঢাকা ] lপ্রেস : ইস্টার্ন কমেরসিএল সার্ভিসেস , ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি - ৮/৪-এ তোপখানা ঢাকাl##সম্পাদনা নির্বাহী সাবেক সংবাদ সংস্থা ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সী বিশেষসংবাদদাতা,দৈনিক দেশ বাংলা
http://themonthlymuktidooth.blogspot.com
Wednesday, October 26, 2011
‘তোমাদের দেশে গুণীর কদর হয় না’ A comments from Dr. Yunus
তখন ক্লাস এইটে পড়ি। কিছুদিন আগে অ্যামেরিকার তখনকার প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন বাংলাদেশ ঘুরে গিয়েছেন। ঐ বয়সেই আগ্রহ করে বিবিসিটা, সিএনএনটা করে দেখা শুরু হয়েছিল। আল-জাজিরার নাম শুনেছি আরও বছর খানেক পরে, দেখা শুরু করেছি তারও পরে।
তো সিএনএনে একদিন দেখা গেল বিল ক্লিনটন কোন এক সফরে গিয়ে যাওয়া বা আসার পথে বেশ ক্যাজুয়াল ভঙ্গিতে একটি ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। স্থানের কথা একেবারেই কিছু মনে নেই। কালটা সম্ভবত ছিল ২০০০ সালের মাঝামাঝি। ক্লিনটন কথা বলছিলেন দারিদ্র্য বিমোচন বিষয়ে। আফ্রিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দারিদ্র্যক্লিষ্ট অঞ্চলগুলোতে জাতিসংঘের পাশাপাশি অ্যামেরিকার সরকার এবং অন্যান্য দেশের সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কী কী কাজ করছে, মোটামুটি এইই ছিল প্রসঙ্গ।
...
দুই দশকেরও অধিক সময়ে বিল ক্লিনটনই বাংলাদেশ সফর করা একমাত্র অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট।
শুনতে শুনতে হঠাৎ বাংলাদেশের নামটা খট করে কানে লাগল। কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করলাম বাংলাদেশকে নিয়ে কি বলেন। দেখা গেল তিনি বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। অনেকটা এভাবে বললেন, গ্রামীণ ব্যাংক যে ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে তা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কাজে লাগিয়ে সুফল পাওয়া যেতে পারে। শুধু গ্রামীণ ব্যাংকই নয়, উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বা সরকারের নাম হয়তো করেছিলেন। কিন্তু সেসব আজ আর মনে নেই, 'বাংলাদেশ'-এর উল্লেখ প্রসঙ্গে আজ শুধু গ্রামীণ ব্যাংকের নামটাই মনে আছে।
সিএনএনে ক্লিনটনের মুখে গ্রামীণ ব্যাংকের নামটি শুনে কিছুটা শিহরিত হয়েছিলাম। কোন গূঢ় কারণ হয়তোবা নেই। কিরগিজস্থানের বিশকেকের কিংবা জার্মানির ম্যানহাইমের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কোন অপরিচিতের মুখে হঠাৎ 'বাংলাদেশ' নামটি শোনার পর কোন প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ বা তরুণীর যে নাম না জানা অনুভূতি হয়, সেই অনুভূতির সাথে হয়তো আমার ঐ অনুভূতির গুণগত বিশেষ কোন পার্থক্যও নেই।
ক্লিনটন তার ঐ বক্তব্যে মুহম্মদ ইউনুসের নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু ইউনুসের সৃষ্টি, ইউনুসের মস্তিষ্কপ্রসূত, ইউনুসের অধ্যাবসায়ের ফল গ্রামীণ ব্যাংকের নাম তিনি উল্লেখ বা শুধু এর প্রশংসাই করেননি, তিনি পৃথিবীতে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য একে এক উদাহরণ হিসেবে নিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এখন অ্যামেরিকার কোন প্রেসিডেন্টের মুখে বাংলাদেশ, গ্রামীণ ব্যাংক বা ইউনুসের নাম শুনে শিহরিত হওয়ার এই ব্যাপারটিকে বাংলাদেশের অনেকেই ভালো চোখে দেখতে নাও পারেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের বামঅধ্যূষিত গণমাধ্যম ব্যাপারটিকে লজ্জাজনক, হীনমন্যতাসুলভ এবং ক্লিনটনের মুখে বাংলাদেশের নামকে বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হতে পারে!
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেটা বেশি উপলব্ধি করেন বলে তারা বলেন, বহির্বিশ্বে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষাপীঠগুলোতে বহু ছাত্রশিক্ষকের সাথে বাংলাদেশের প্রথম পরিচয়ের মাধ্যম হচ্ছেন এই মুহম্মদ ইউনুস, আর তার গ্রামীণ ব্যাংক।
বাংলাদেশ সেই মুহম্মদ ইউনুসের কী হাল করেছে তা গত বছর দেড় দুয়েক ধরে বাংলাদেশিরা দেখছে।
মুহম্মদ ইউনুসকে আইন-আদালতে দৌড় করানোর প্রতিবাদ করলে অনেকে বলে উঠেন, আরে ভাই এসব কী বলেন? নোবেল পেয়েছেন দেখে কি তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে চলে গেলেন নাকি?
না মুহম্মদ ইউনুস অবশ্যই আইন-আদালতের ঊর্ধ্বে নন। যেমন এ বছর স্টক মার্কেটে ধ্বস নামবার পর চারদলীয় জোট এমপি ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ তার ইন্টারনেটে বহুল প্রচারিত সংসদীয় বক্তব্যে বলেছিলেন, কিছু কিছু মানুষের জন্য ল' কিছুটা হলেও কার্ভ করে যেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ তিনি ওয়ান-ইলেভেন আমলে বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার সাবজেলে থাকার উল্লেখ করেছিলেন।
...
শুধু ডক্টর ইউনুসই নন, গ্রামীণ ব্যাংকে তার পক্ষে কথা বলা কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে হয়রানি করা হয়। ছবিতে গ্রামীণ ব্যাংকের ইউনিয়ন নেতা সগির রশীদ চৌধুরীকে দেখা যাচ্ছে। তিনি ডক্টর ইউনুসকে গ্রামীণ থেকে অপসারণের পর ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভরত অবস্থায় সাদা পোষাকধারী অজ্ঞাতদের হাতে অপহৃত হন। পরে পিটিয়ে আহত করে এবং আন্দোলন পরিত্যাগ না করলে স্ত্রী সন্তানদের হত্যা করার হুমকি দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মুহম্মদ ইউনুসের জন্য আমাদের দরকার তো নেই আইন কার্ভ করার। প্রচলিত আইনেই আমরা থাকি। প্রচলিত আইনের কথা ধরে নিয়েই, আজ ক'জন বাংলাদেশি বিশ্বাস করেন যে বর্তমান সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইউনুসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে উৎখাত করেছে?
বিশ্বাস করার কী উপায় আছে? ইউনুসকে যখন উৎখাত করা হল তখন ব্যাপারটির সমর্থনে দু'ধরণের আলোচনা হচ্ছিল। সমর্থক রাজনীতিবিদদের বক্তব্য, বক্তব্য মানে একদম সরাসরি বক্তব্য, 'ইউনুস তো রাজনৈতিক দল খুলতে চেয়েছিল'। আরেক শীর্ষ রাজনীতিবিদের বক্তব্য, 'ইউনুস রক্তচোষা'। বক্তব্যগুলো কেমন, সেগুলো বিশ্বাস করা যায় কিনা, সেই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মানুষ নিবে। আমিও বাংলাদেশেরই মানুষ। তবে সব বাংলাদেশির মনের কথা তো আর আমি জানি না, সবার যখন সেটা প্রকাশের সুযোগ আসবে তখন তারা হয়তো প্রকাশ করবে।
আর বুদ্ধিজীবিদের বক্তব্য ছিল, গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র্যমোচনে আসলে কী ভূমিকা রেখেছে, আসলেই কোন ভূমিকা ছিল কিনা, ইত্যাদি জিজ্ঞাসা। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায় রুমানা মঞ্জুরের কথা। ইন্টারনেটে এই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে ও দেখতে গিয়ে স্তম্ভিত হয়ে দেখছিলাম, অনেকে বলছেন 'নিশয়ই রুমানা মঞ্জুরের কোন অ্যাফেয়ার ছিল!', 'নিশ্চয়ই সে ভালো ছিল না!', 'নিশ্চয়ই কোন কারণ ছিল!', 'এক হাতে তালি বাজে না!' ইত্যাদি। রুমানার অ্যাফেয়ার ছিল বলে তার চোখ উপড়ে দিতে হবে? ইসলামের কোন পাতায় লেখা আছে ও কথা? সে খারাপ হলে, তালি বাজালে তার নাক আর কান কামড়ে দু'আঙ্গুল তার চোখে ঢুকিয়ে দিতে হবে?
তো গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র্য মোচন করতে পেরেছে কিনা সেই তর্ক অনেকটাই ঐ হাসান সাঈদের সমর্থনের মতই মনে হয়েছে। যেন গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র্য মোচনে সফল না হলে ইউনুসের বিরুদ্ধে সরকারের মুহুর্মুহ প্রতিহিংসা জায়েয হয়ে গেল!
আগে যে কথা বলছি, তা আবারও বলছি, ইউনুসের বয়স সত্তর না একশো সত্তর, কোথায় কী লেখা আছে সেসব পরের কথা। আজ রাস্তায় নেমে, কিংবা পথেঘাটে চলার সময় একজন মানুষকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, ইউনুসের বিরুদ্ধে সরকারী সব আয়োজনের ব্যাপারে তারা কি বলেন।
তর্ককে খাতির করলে একথার জবাব হচ্ছে, মানুষ কি বলে না বলে সেটা বড়, না আইন বড়। হ্যাঁ, একশোবার আইন বড়। এই যে আইন বড়, সেটাও মানুষের জবাবের মুখেই বলুন। তারা যে জবাব দেবে, তাতে যুক্তি থাকবে, বাস্তবতা থাকবে।
শেষ কথা।
বাংলাদেশের এক রাষ্ট্রপ্রধান সদ্য নিহত হয়েছেন। এর কিছুদিন পর কয়েকজন কূটনীতিক বিদেশে গেলেন সেদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে নিয়মিত সাক্ষাত করতে। আলোচ্য বিষয় হত্যাকান্ড বা অভ্যুত্থান নয়, সম্পুর্ণ অন্য কিছু। একের পর এক প্রতিনিধিরা সেই রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে দেখ করে যাচ্ছেন। যখন বাংলাদেশের ডাক এল তখন রাষ্ট্রপ্রধানের অধীনস্তরা তাকে জানালেন, এরা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। রাষ্ট্রপ্রধান শোনার সাথে সাথে মুখ বেঁকিয়ে চুরিয়ে দ্রুত কী যেন বললেন। বলতে বলতে আঙ্গুলের একটা ভঙ্গি করলেন, যার মানে ছিল বন্দুকের ট্রিগার চাপা। বাংলাদেশি প্রতিনিধি বেচারা দুশ্চিন্তায় পড়লেন, কী ব্যাপার মেরে টেরে ফেলার কথা বলে কেন? রাষ্ট্রপ্রধানের কথা শেষ হলে তার দোভাষী জানালেন, তিনি রেগেমেগে জানতে চেয়েছেন তোমরা রাষ্ট্রপ্রধানকে মেরেছ কেন? তোমাদের সাথে কথা বলব না! তখন বাংলাদেশের প্রতিনিধি হতভম্ব ও বিচলিত হয়ে দোভাষীকে বললেন, আপনি উনাকে বুঝিয়ে বলুন, আমরা ওনাকে মারিনি। আমরা ওনারই লোক। যে ওনাকে মেরেছে সেই আমাদেরকে এখানে পাঠিয়েছে। দোভাষী ব্যাপারটি রাষ্ট্রপ্রধানকে বুঝিয়ে বলার পর তার রাগ কমল না। একটু থেমে সে কী যেন বলল। বলা শেষ হলে দোভাষী ঘুরে জানাল, উনি বলেছেন তোমাদের দেশে গুণীর কদর হয়না। যে দেশে গুণীর কদর হয় না সে দেশে এক সময়ে আর গুণী জন্মাবে না।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment