http://themonthlymuktidooth.blogspot.com

Sunday, October 9, 2011

তিন বছরে ২ হাজার গার্মেন্ট বন্ধ Two Thousand Garments closed in last three Years, Is Unauthorized Small Factories are Responsible???


পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র তালিকায় ২০০৮ সালে দেশে গার্মেন্ট কারখানার সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৬০৮টি। সম্প্রতি বিজিএমইএ হালনাগাদ একটি তালিকা তৈরি করেছে। এতে চালু কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৬০টি। ২০০৮ থেকে এ পর্যন্ত গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে ২ হাজার ৩৪২টি। প্রায় সাড়ে তিন বছরে এত বিপুলসংখ্যক পোশাক তৈরির কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক। এ খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি সামনে আরও ভয়াবহ হবে। ইউরোপজুড়ে আবার মন্দা দেখা দিয়েছে। এই মন্দার ধাক্কায় চালু কারখানার অবস্থাও নাজুক হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা।
বিষয়টিকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে জরুরি ভিত্তিতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ। গতকাল তিনি আমার দেশ-কে বলেন, পোশাক খাতের চলমান সঙ্কট দীর্ঘায়িত হলে দেশের গোটা অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসবে।
কেন এভাবে একে একে পোশাক তৈরি কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গতকাল আমার দেশ-কে বলেন, ‘কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে—এটা বললে ছোট করে বলা হবে। আমরা আসলে মরে যাচ্ছি। গত এক বছরেই অন্তত ৩শ’ কারখানা মরে গেছে। আর এগুলোর বেশিরভাগই বড় কারখানা। আর যদি চার বছরের হিসাব ধরা হয় তবে ছোট-বড় মিলিয়ে বন্ধ কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ছাড়াবে।’ তিনি বলেন, ব্যবসার স্বাভাবিক নিয়মে কিছু কারখানা বন্ধ হতেই পারে। এটা হাতেগোনা কিছু হতে পারে। কিন্তু যখন শত শত বা হাজার হাজার শিল্প বন্ধ হয়ে যায় তখন আর এটাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার বড় ধাক্কা লেগেছে পোশাক খাতেও। সেই মন্দা কাটতে না কাটতেই ইউরোপজুড়ে আবারও মন্দা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে দেশে গ্যাস, বিদ্যুত্ ও অবকাঠামোগত অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই নাজুক। আমরা বিশ্ববাজারে সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছি। এছাড়া আমাদের শিল্পায়ন হচ্ছে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে।
জানা গেছে, এক কঠিন সময় পার করছে দেশের পোশাক খাত। ২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হওয়ার পর থেকেই তৈরি পোশাকের বাজার সংকুচিত হতে থাকে। বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারা পোশাকের দাম কমাতে থাকেন। একপর্যায়ে ক্রেতা ধরে রাখতে লোকসান দিয়েই রফতানি চালু রাখেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা। পোশাক শিল্প মালিকদের সরকারের তরফ থেকে প্রণোদনা সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়। বিদেশি ক্রেতাদের তরফ থেকেও আশ্বাস ছিল দাম বাড়ানোর। তবে সরকারি প্রণোদনা সহায়তা যেমন মেলেনি, তেমনি তৈরি পোশাকের দামও আর বাড়ানো হয়নি ক্রেতাদের তরফ থেকে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রতিযোগী দেশ চীন, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ বেশ কয়েকটি দেশ বিশ্ববাজারে দামের প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে একাধিক প্রণোদনা সহায়তা ছাড় করে। আর এসব সহায়তা বাংলাদেশের রফতানিকারকদের জন্য আরও কাল হয়ে দাঁড়ায়।
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এ প্রসঙ্গে বলেন, গত কয়েক বছরে যেসব কারখানা বন্ধ হয়েছে তার ৮০ ভাগই ছোট ও মাঝারি মানের। আর এসব কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে—এমন আভাস অনেক আগেই বিজিএমইএ’র তরফ থেকে সরকারকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারি প্রণোদনা সহায়তা সময়মত পাওয়া যায়নি। ফলে বিশ্ব বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেনি দেশীয় এসব কারখানা।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে আমাদের উত্পাদন খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। বিশেষ করে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কারখানা চালাতে গিয়ে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ বেশি খরচ বহন করতে হচ্ছে কারখানা মালিকদের। আর সময়মত পণ্য উত্পাদন করতে না পারলে শিপমেন্ট ঠিক রাখা যায় না। এক্ষেত্রে রফতানিকারকদের জাহাজে পণ্য না পাঠিয়ে আকাশপথে বিকল্প ব্যবস্থায় পণ্য পাঠাতে হয়। এতেও ব্যয় বাড়ছে। ফলে বিশ্ববাজারে সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) বর্তমান সভাপতি একে আজাদ দেশের পোশাক খাতের একজন বড় উদ্যোক্তা। তার কাছে প্রশ্ন ছিল—এভাবে একের পর এক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়াটাকে তিনি কীভাবে দেখছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা মোটেও স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখার বিষয় নয়। রীতিমত উদ্বেগের বিষয়। এর নেতিবাচক প্রভাব গোটা অর্থনীতিতে পড়বে। এখন যে কারখানাগুলো বন্ধ হচ্ছে সেগুলো হয়তো আকারে ছোট বা মাঝারি মানের। কিন্তু এসব কারখানার সঙ্গে একেবারে কম শ্রমিক জড়িত নয়। হাজার হাজার শ্রমিক এসব কারখানায় কাজ করে, ফলে শ্রমের বাজারে ধাক্কা লাগবে। এজন্য দরকার উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা।’ হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার ও এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ আরও বলেন, কিছু কারখানা বড় উদ্যোক্তারা কিনে নিচ্ছেন। আবার বিদেশি মালিকানায়ও চলে যাচ্ছে অনেক ছোট ও মাঝারি মানের কারখানা। তবে এটা ঠিক, গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার সংখ্যা দু’হাজারের কম হবে না।
যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে : বিজিএমইএ তাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বন্ধ হয়ে যাওয়া পোশাক কারখানার তালিকা চেয়ে কিছুদিন পর পরই চিঠি পাঠাচ্ছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর জবাব আসে না। আবার এসব কারখানা বিজিএমইএ থেকে রফতানির জন্য ‘ইউডি’ও নেয় না। এমন কারখানা আছে প্রায় দেড় হাজার। আবার বিজিএমইএ’র কাছে লিখিতভাবে কারখানা বন্ধের আবেদন জানিয়েছে, এমন কারখানার একটি তালিকাও করেছে বিজিএমইএ। ২০০৮ সালের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত বিজিএমইএ’র সহায়তা নিয়ে যেসব কারখানা বন্ধ হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আছে ডিলাক্স অ্যাপারেলস লিমিটেড, জাহেদ ফ্যাশন, ওরিয়েন্ট নিটিং অ্যান্ড অ্যাপারেল, নুরজাহান নিটিং, এমকে ফ্যাশন, লাভলি গার্মেন্ট লিমিটেড, কেআরসি টপ শার্টস লিমিটেড, নোভা অ্যাপারেলস লিমিটেড, তমিজ উদ্দিন ফ্যাশন লিমিটেড, বাঘশান গার্মেন্টস লিমিটেড, স্মার্ট অ্যাপারেল, শার্প লিমিটেড, উত্তরা নিটওয়্যার লিমিটেড, হক ইন্টারন্যাশনাল, নর্থ স্টার অ্যাপারেল, আলবিন অ্যাপারেল, শতাব্দী ফ্যাশন লিমিটেড, ফ্যাশন কেয়ার লিমিটেড, ম্যাক্সকেপ ডিজাইন, রিপলিকা ক্রিয়েটার্স, এআরএন সুয়েটার, এমিনেন্ট ফ্যাশন, কুইন্স অ্যাপারেলস, রাজ নিটিং অ্যাপারেল, ইরিন নিটওয়্যার, নাইস নিটিং, রিসাত নিটস, আরবি অ্যাপারেল, রোজ ফ্যাশন, মৌসুমি অ্যাপারেলস, কাজি ফ্যাশন, মোহাম্মদী ফ্যাশন, ফ্লোরেন্স অ্যাপারেল, নাভেলি গার্মেন্টস, বৃষ্টি গার্মেন্টস, দি নিট অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রি, হাউজ অব সানশাইন, বেসিক অ্যাপারেল, ওয়াইহো ফ্যাশন, আরআর ফ্যাশন, ইম্প্রোসিভ অ্যাপারেলস, ইকরা ফ্যাশন, ইউরো বাংলা সুয়েটারস, ওয়ারিকা ফ্যাশন, ভেঞ্চার অ্যাপারেল, জাহান গার্মেন্টস, মির আলা লিমিটেড, আলপাইন মাল্টি অ্যাপারেলস, স্টার্লিং গার্মেন্টস, ফ্লোরাইন ফ্যাশন, এক্সপো লিমিটেড, বার্ডেক্স ইন্টারন্যাশনাল, এমকে ফ্যাশন, নোডিটেক্স ফ্যাশন, জাহানারা ফ্যাশন, সিবিএম ইন্টারন্যাশনাল, সাভার গার্মেন্টস, হাসনা নিটিং, ক্রিয়েটিভ ডিজাইন, সানশাইন অ্যাপারেল, মদিনা ওয়্যারহাউজ লিমিটেড, আল আমিন গার্মেন্টস, জাহিন গার্মেন্ট, এবিসি অ্যাপারেল প্রভৃতি।
বেকার হয়েছে প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক : বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, একটি বড় মানের পোশাক কারখানায় ১ থেকে ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে। আবার ছোট ও মাঝারি মানের কারখানায় শ্রমিক থাকে ২শ’ থেকে ৫শ’ পর্যন্ত। এই হিসাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া পোশাক কারখানাগুলোতে বেকার শ্রমিকের সংখ্যা ১৬ থেকে ১৭ লাখ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের গবেষণা সেলের একজন কর্মকর্তা। তিনি জানান, সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থাও প্রায় এক বছর আগে পোশাক খাতের বেকার শ্রমিকদের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এ তালিকায় ৬২টি গার্মেন্টস স্থান পায়, যেখানে শ্রমিক দেখানো হয়েছিল ২২ হাজার।
দ্বিগুণ ব্যয়ে পণ্য যাচ্ছে আকাশপথে : চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রফতানিজাত পণ্য পরিবহন কমে বাড়ছে আকাশপথে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে ভাড়া করা বিমানে প্রায় ৪ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার পণ্য পাঠানো হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। গত বছরের তুলনায় এ বছর একই সময়ে আকাশপথে পণ্য পরিবহন বেড়েছে প্রায় ৪১ শতাংশ। ভাড়া করা বিমানে রফতানিজাত পণ্য পাঠাতে ব্যয়ও বেড়ে গেছে। বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে, সমুদ্রপথের তুলনায় আকাশপথে বাড়তি প্রায় ৭৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রফতানিতে সময় বেড়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন জটিলতার সঙ্গে স্থানীয়ভাবে গ্যাস ও বিদ্যুত্ সঙ্কটই আকাশপথে বাড়তি ব্যয়ে পণ্য রফতানির মূল কারণ বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, সমুদ্রপথে পণ্য পাঠাতে যতটা খরচ তার চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি খরচ হয় বিমানে পণ্য পাঠাতে। তারপরও কেন বাড়তি খরচে পণ্য পাঠানো হচ্ছে? জানতে চাইলে মুর্শেদী বলেন, ক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দিতেই আকাশপথে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে। তিনি জানান, চট্টগ্রামের সঙ্গে সড়ক ব্যবস্থাও এখন ভালো না। এছাড়া গাজীপুর, ভালুকা, ময়মনসিংহসহ যেসব এলাকায় পোশাক কারখানা অবস্থিত সেগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বন্দরে পণ্য আনা-নেয়ার সময় বেড়ে যাচ্ছে। এসব পণ্য নির্দিষ্ট ক্রেতার হাতে পৌঁছতে এখন অন্তত দেড়-দু’মাস সময় লেগে যাচ্ছে। অথচ গত বছরও তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছানো যেত। এ কারণে লিড টাইম কমাতে আকাশপথে মাল যাচ্ছে।
এদিকে গত অর্থবছরের ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে দেশের বেসিক টি-শার্ট উত্পাদকরা একপিস শার্ট তৈরিতে খরচ করতেন ৮৫ থেকে ৯০ মার্কিন সেন্ট। এখন একই মানের বেসিক টি-শার্ট তৈরিতে খরচ পড়ছে এক ডলার ৭০ সেন্ট থেকে ১ ডলার ৯০ সেন্ট পর্যন্ত। বেসিক টি-শার্ট উত্পাদনে এক বছরে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৯৫ শতাংশ।
উত্পাদন ব্যয় বাড়ার পেছনে মূলত তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন উত্পাদকরা। এগুলো হচ্ছে সুতার মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি এবং বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার। এই তিন কারণে রফতানি আদেশ ঠিক রাখতে আবার সমুদ্রপথে পণ্য না পাঠিয়ে পণ্য যাচ্ছে আকাশপথে। ফলে উত্পাদন খরচ আরও বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সদস্যরাই মূলত বেসিক টি-শার্ট তৈরি করেন। সংগঠনের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম টেলিফোনে আমার দেশকে জানিয়েছেন, নিটপণ্যের প্রায় শত রকম আইটেম রফতানি হয় বিদেশে। এসব পণ্যের সবগুলোর উত্পাদন ব্যয় গত এক বছরে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। তিনি জানান, বেসিক পণ্যের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা কমে গেছে। আগে যারা দশটি বেসিক পণ্য কিনতেন, তারা এখন হয়ত মাসে পাঁচটি কিনছেন। এতে দেখা গেছে, বেসিক পণ্যের রফতানি অর্ধেক কমে গেছে। ক্রেতা নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, বাড়তি উত্পাদন খরচের কারণে প্রতিযোগী অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের রফতানিকারকরা পিছিয়ে পড়ছেন।
আবার অর্থনৈতিক মন্দা : আবারও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় এ মন্দার ধাক্কায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। পতন হচ্ছে শেয়ারবাজারেরও। বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিত বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছে। ইউরোপ-আমেরিকায় মন্দার প্রভাবে বাংলাদেশের রফতানি আয়েও ধাক্কা লেগেছে। রফতানি অর্ডার কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মার্চ থেকে হঠাত্ করেই রফতানি আদেশ কমছে। সাধারণত মার্চে যেসব অর্ডার প্লেস হয় সেগুলো রফতানি হয় পরের ৩ থেকে ৪ মাসের মাথায়। কিন্তু সে সময় যেসব ক্রেতা অর্ডার দিয়েছেন, তার অর্ধেকও চূড়ান্ত হয়নি। আবার অর্ডারকৃত পণ্যের ডেলিভারিও নিচ্ছেন না ক্রেতারা। এ অবস্থায় গত ৪ মাসে অন্তত ২৫ ভাগ গার্মেন্ট পণ্য উত্পাদন কমিয়ে দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

No comments: