সমস্ত
নির্যাতিত নারী ও শিশু এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত সমস্ত শিশু, নারীর এবং আমার ও আমাদের সবার
একটাই আর্তনাদ তা হলো বিচারের। আমরা
বিচারের আর্তনাদ জানাই। গত বছর সাড়া জাগানো নোয়াখালীর
ঘটনা একরকম হত্যা মামলা, একরাম হত্যায় দীর্ঘদিন পার
হওয়ার পরও বিচার না পেয়ে হতাশ হয়ে আর্তনাদ করে আকুতি এবং অভিমানী কণ্ঠে তার পরিবার
বলেছিলো বিচার পেলামনা বিচার কেয়া মতের দিন পাবো। আমি বলবো কেয়ামতের দিনতো
সৃষ্টিকর্তা সব অপরাধের এবং অপরাধীদের বিচার করবেই। তবে এই দুনিয়াতে মানব সমাজের
বিচারালয়ে বিচার হতে হবে আমরা তাই চাই। এ আর্তনাদ
আজ সবার।
গতমাসে ৮৩ নারী
ধর্ষিতা। জুলাই মাসে ৩৬৮ নারী বিভিন্ন
ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে
ধর্ষণের ঘটনা ৮৩ টি। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৫ জন। আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৯
জনকে। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে
১৯ জনকে। শ্লীলতা হানির শিকার হয়েছেন ১০ জন। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন
একজন। গত মাসে ৬২ জন নারী ও শিশুকে
হত্যা করা হয়েছে। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার
হয়েছেন ৪১ জন নারী। যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে ১৯
জনকে। এসিড দগ্ধ হয়েছে ৪ জন। অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ছয়টি। নারী ও শিশু পাচার হয়েছে ৪ জন। এর মধ্যে যৌন পল্লীতে বিক্রি
করা হয়েছে ২ জনকে। নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৪ জন
গৃহ পরিচারিকা। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ২ জনকে
ওই সময়ের মধ্যে উত্তক্ত করা হয়েছে ২৪ জনকে। এর মধ্যে
আত্মহত্যা করেছেন একজন। ফতোয়ার শিকার হয়েছেন। ৭ জন। বিভিন্ন নির্যাতনের কারণে ২৬ জন
আত্মহত্যা করেছেন এবং ৯ জনের রহস্য জনক মৃত্যু হয়েছে। বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে ৩ জন। পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন
২ জন। শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে ৩০ জনকে। গত ৪ আগস্ট বাংলাদেশ মহিলা
পরিষদের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
গত এক
মাসেই যদি এ অবস্থা হয় তাহলে পুরো বছরের হিসেবের রূপরেখা কি হতে পারে তা কি ভাবা
যায় অনুমানতো করা যায়। শিশু নির্যাতন ও কোন অংশে কম নয়। অপরাধির এবং অপরাধের ধরণ
পাল্টেছে অভিনব কায়দায় বিকৃত ভাবে শিশু নির্যাতন ও হত্যা চলছে। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, ধনী গরীবদের ব্যবধান, সচেতনের অভাব, শিশু শ্রম, গরীবের উপর ধনীর প্রভাব বিস্তার, দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, রাজনৈতিক হানাহানি, রাজনৈতিক লড়াই এবং বিচার না
হওয়া আরো অনেক কিছুই দায়ী এ অবস্থার জন্য।
গত ৫ই
আগস্ট পত্রিকায় দেখলাম সুটকেসে ৯ বছরের শিশুর লাশ। শিশুর শরীরে আগুনের ছ্যাকা ও
বলাৎকারের আলামত পাওয়া গেছে। গত ৩১শে
ডিসেম্বর পানির পাইপের ভিতরে পড়ে জিহাদের মৃত্যু সবাইকে কম বেশী নাড়িয়ে দিয়েছে। মনে হয় অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা
কিন্তু গভীরে গিয়ে বিশ্লেষন করলে দেখা যায় কে বা কারা জড়িত আছে। যাদের বিচার আজও শেষ হয়নি ও
ভাবেই চলছে। বিচার না করে জিহাদের বাবাকেই
নাজেহাল করা হয়েছে। তারপর সিলেটের রাজন হত্যা, তারও কোন বিচার কাজ আজও হয়নি। তারপর সাভারে সাগর হোসেন ১০ বছর
বয়সী শিশুকে মাদক সেবনের অপরাধী বলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, তার বিচারও আজও হয়নি, ময়মনসিংহের ভালুকায় ছাগল চুরির
অপরাধে জাম গাছের সাথে ঝুলিয়ে শামীম নামে এক শিশুকে পালাক্রমে নির্যাচন চালানো হয়, তাদের বিচার আজও হয়নি। তারপর ২টি বাচ্চা তার মায়ের
সাথে দেখা করতে যাওয়ায় ১৮ মিনিট বাচ্চা দুটিকে পিটানো হয় তার যথাযথ বিচার হয়েছে? তারপর সাতক্ষীরায় রাস্তায় উপর
খেলে কাঁদা করার অপরাধে ছোট দুটি বাচ্চাকে গাছের সাথে বেঁধে রেখে নির্যাতন চালানো
হয় কি নিষ্ঠুর সেই দৃশ্য, তারও বিচার হয়নি। হয়নি বরগুনার শিশু রবিউল আউয়াল
হত্যার বিচার, বিচার হয়নি চাঞ্চল্যকর রাকীব
হত্যার, খুলনার কত বিকৃত কায়দায়
শিশুটিকে মারা হয়েছে এবং সম্প্রতি বুলেট বেগম (সুরাইয়া) ও তার মা বুলেটে ঝাঁজরা
তারও বিচার আমরা পাইনি।
নাম না
জানা এমন অসংখ্য শিশু প্রতিনিয়তই নির্যাতন বা হত্যা হচ্ছে, বিচার হচ্ছে না, কেউ জানতেও পারছেনা। বিচার না হওয়াতে দিন দিন অপরাধ
প্রবনতা বেড়েই যাচ্ছে। সমস্ত শিশুর আত্মা আজ কষ্ট
পাচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে তাদের মায়েরাও, কষ্ট পাচ্ছে সমস্ত নির্যাতিত
নারীরাও। কষ্ট পাচ্ছি আমিও। আমাদের সকলের এখন একটাই আর্তনাদ
বিচার হবে কবে? অচিরেই বিচার হউক সমস্ত
অপরাধীদের। আইন ও আইনের শাসনের প্রতি আমরা
আস্থা হারাতে চাই না সম্মান রেখেই বলছি আমাদের অধিকার আস্থা আমাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া
হউক। আইন ও আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা
হউক আমরা তাই প্রত্যাশা করি। আইন ও
আইনের শাসন মানুষের কল্যাণের জন্যই। তার যথাযথ
ভূমিকা না থাকলে আস্তে আস্তে মানুষ আস্থা হারিয়ে নিজেরাই হিংস্রজন্তু হয়ে উঠবে। সভ্য সমাজের দৃশ্যপট বদলে যাবে।
কালকে
দেখলাম ৫ম শ্রেণীর এক এতিম অসহায় শিশুকে আওয়ামী লীগের পৌর সহ-সভাপতি ধর্ষণ করে
রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে গেছে। কয়েকদিন
আগে পত্রিকায় দেখলাম জমি জমার শত্র“তার জের
ধরে নানী-নাতনীকে সারা রাত ধর্ষণ করা হয়েছে। আমরা এসব
চিত্র আর দেখতে চাইনা। চাই এই নোংড়া কাজ গুলোর বিচার
হউক। অপরাধী যে হউক। শিশু ও নারী সংগঠন গুলোকে আরো
শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। উপর মহলের দায় সারা বক্তব্য
মনোভাব বাদ দিতে হবে। স্পষ্ট করে বলতে হবে এসব
অন্যায়ের বিচার হবে কবে? এবং বিচার কার্য নিশ্চিত করতে
হবে। আমরা মন ভুলানো কথা শুনতে চাইনা। চাইনা বিচার কার্যের নীতিমালাও
প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী আলোচনা শুনতে। আমরা বিচার
চাই অতি শীঘ্রই। কত ঘটনারইতো বিচার কাজ চলছে এবং
বিচারও হচ্ছে, তবে এগুলো কেন পিচিয়ে থাকবে এই
বিচারগুলো সমান ভাবে এগিয়ে যাক এবং যাবেই এটাই আমি বা আমরা আশা করি।
নারী
পিছিয়ে নেই সবক্ষেত্রে, সব জায়গাতেই এগিয়ে যাচ্ছে সৌদি
আরবে পৌরসভা নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নতুন ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে। দেশটি এই প্রথম বারের মত নারীরা
ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। সৌদি শূরা কাউন্সিলের ৬ জন নারী
সদস্যের অংশগ্রহণে দেশটির নারী সংগঠন আল-নাহাদা মানব হিতৈষী সোসাইটি আসন্ন পৌর
নির্বাচনের জন্য নারীদের প্রশিক্ষন দিচ্ছে। এই হলো
বর্তমানে সেখানকার অবস্থা। জানার পর সত্যি খুব আনন্দিত
হলাম, অর্থাৎ কোথাও আর নারীরা পিছিয়ে
নেই বা অবহেলিত নয়।
শিশুকে
বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো গার্মেন্টস শ্রমিকের। গত ৪ই আগস্ট পত্রিকায় দেখলাম
রেললাইন থেকে এক শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে ট্রেনের নিচে কাটাপড়ে প্রাণ গেল এক গার্মেন্টস
শ্রমিকের। যুবকটির বয়স ৩৫ বছর। রাজধানীর বনানী সৈনিক ক্লাব
সংলগ্ন রেল লাইনে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। আমি কাউকে
মরতে বলছিনা তবে ঘটনাটি লিখে শুধু বলতে চাই এরাই সত্যিকারের মানুষ ওদের মনুষ্যত্ব
আছে। একটি শিশুর মৃত্যু দেখে সে
নিজের জীবনের কথা ভাবেনি। শুধুই শিশুটিকে রক্ষা করতে হবে
তাই ভেবেছে এ ভাবনা আমাদের সবার কি হতে পারেনা। এভাবে আমরা কেন ভাবতে পারছিনা, সেতো মরেও শিশুটির মধ্যেই বেঁচে
আছে। আমরাও এভাবে বাঁচতে চাই। অন্যায় করে নয়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। প্রতিরোধ গড়ে তুলে এই ঘটনা এই
মুহুর্তে একটি বড় শিক্ষা, লোকটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিক্ষা
দিয়ে গেল। আমরা তা কেন শিখছিনা।
বাঙ্গালী
বীরের জাতি কাউকে ভয় পায়না। সবাই
একত্রিত হয়ে অনেক অসাধ্যই সাধন করা সম্ভব তা প্রমানিত। সমস্ত বাঙ্গালী এক হয়ে জীবনের
পরোয়া না করে ঝাপিয়ে পড়েছিল বলেই মাত্র ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশ শত্র“ মুক্ত হয়ে স্বাধীন হয়েছিল। মাঝে একটা সময় আমরা খুব
ইভটিজিংয়ের বাড়াবাড়ি দেখেছিলাম। সমস্ত
মানুষ এ ব্যাপারে সচেতন হয়েছিল একত্রে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে ছিল। সবাই একমত হয়ে প্রতিবাদ জোড়ালো
ভাবে করে ছিল তার ফলে এখন অনেকটাই এ অপরাধ কমে গেছে। তবে বুঝা যায় সবাই একত্রিত হলে একি
মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে এসব অপরাধও কমতে বাধ্য। আমরা রাজন হত্যায় দেখেছি
গ্রামের লোকজন অপরাধীদের বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছে। অপরাধীদের গ্রাম বাসীরাই আইনের
প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই অপরাধীকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। রবিউল হত্যায় দেখলাম জনগণ
একত্রিত হয়ে আসামীদের মার ধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। সমস্ত মানুষ যদি এক হয়ে এসব
অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। অপরাধের
বিচারের দাবিতে এক হয়ে জনমত তৈরী করে শক্তিশালী রূপে প্রকাশ ঘটে তাহলে অচিরেই এসব
হত্যার বিচার হবে এবং অপরাধ প্রবনতাও কমবে। আমি বলতে
চাই জনমত এবং জনসচেতনতা তৈরী করতে হবে ও সাহসী মনোভাব নিয়ে আমি বা আমরা সবাই
একত্রিত হতে হবে। তবেই আস্তে আস্তে শিশু নির্যাতন, নারী নির্যাতন, শিশু ও নারী হত্যা, অন্যায়, অবিচার কমে আসেবই।
প্রতিটি
শিশু ও নারীদের সাথে যে অন্যায় হয়েছে বিচার পাওয়া তার অধিকার। এ অধিকার খর্ব করা যাবেনা। সবার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত
করতে হবে। সমস্ত নির্যাতিত শিশু, নারীও আমি বা আমরা আজ আর্তনাদ
করছি বিচারের জন্য এবং দাবি করছি আশাও করছি আমাদের এ আর্তনাদ বিফলে যাবেনা বিশ্বাস
করতে চাই আমাদের এ আর্তনাদ সফল হবে পূর্ণতা পাবে। সব শিশু ও নারী নিরাপদে থাকবে। থাকবে আগামীর সব শিশু এবং মাও। যৌতুকের টাকা না পেয়ে এক নারীকে
এসিড খাওয়ানো হয়েছে। এ মর্মান্তিক ঘটনা দেখতে বা
শুনতে চাইনা আমরা কেউ আর এসিড খেতে চাইনা। চাই নিরাপদ
সুন্দর জীবন।
ডাঃ
রুখসানা আমিন সুরমা
No comments:
Post a Comment