http://themonthlymuktidooth.blogspot.com

Monday, February 20, 2017

রাজনীতির মেরুকরণ কোথায় যাচ্ছে? দেশপ্রেমিক পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা



১৫ই ফেব্রয়ারি ২০১৭ নতুন সিইসি শপথ গ্রহণের পর নতুন রাজনীতির খেলা শুরু হয়েছে। এদিকে নানাভাবে আওয়ামী লীগ থেকে বলা হচ্ছে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে? আওয়ামী লীগের ভাষায় বিএনপি কি নির্বাচন বিমূখ কোন দল? যে দলটি বাংলাদেশের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল। যে দলের প্রধান বীরউত্তম শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি সামনে থেকে দল করে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই দলের বর্তমান কণধার হচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য সহধর্মিনী এদেশের তিন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক বিরোধী দলের নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দেখে অবাক হই দেশের এমন একজন সিনিয়র নাগরিককে সপ্তাহে দিন আদালতে হাজির হতে হয়। ঘন্টার পরে ঘন্টা বসে থাকতে হয়। অন্যদিকে দেখি ইয়াবার বড় বড় চালান নিয়েও ধরা খেয়ে কারাগারে গিয়ে আবার অন্যদিক থেকে বের হয়ে আসে। চোর ছেচ্ছররা আজকাল কারাগারে তেমন নেই। কারণ বাংলাদেশের প্রতিটি কারাগার এখন যে কোনভাবেই হোক বিএনপি ২০ দলীয় জোটের দখলেই রয়েছে। গত ১০ বছর ক্ষমতার কোন জায়গায় দখল করতে না পারলেও সরকারের ভালোবাসায় কারাগারে অবস্থান নিয়ে বেশ জোরেশোরে দখলদার হয়েছে। সরকার যখন যাকে ইচ্ছা সেই অনুযায়ী মামলা দায়ের করে কারাগারে  নিক্ষেপ করতে সময় নেন না। এইতো দিন আগেই কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে বের হলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি একসময় আওয়ামী লীগই করতেন। সেই দলের বড় নেতা ছিলেন। কথা বার্তায় বনি বনা না হওয়ায় তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় কারাগারে যেতে হয়। আমি ভেবেছিলাম বের হয়ে নিরব থাকবেন কিন্তু আমার ভাবনাকে উল্টিয়ে দিয়ে তিনি আবারও সরব হয়ে উঠেছেন। সরব হয়ে উঠেছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সাহসী সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই মহান ভাষার মাসে এই দুইজন সাহসী বীরকে স্যালুট জানাই। দিন আগে সম্ভবত ১২ ফেব্রয়ারি বরিশালে ভাষা সৈনিক মোঃ ইউসুফ কালুর বাসভবনে গিয়েছিলেন। তিনি একদিকে মহান ভাষা সৈনিক অন্যদিকে বীরমুক্তিযোদ্ধা। ভাষার জন্যই কালীন সময়ে দুবার কারাগারে যেতে হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য ভাষার মাসে ভাষা সৈনিকরাতো সময়ের কারণে সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছেন। জাতীয় বীররা বয়সের কারণে না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছেন। যারা বেঁচে আছেন তাদেরকে সম্মান দিতেও আমরা ভুলে গেছি। ভাষা মতিনের কথা মনে পড়ছে বেশ। তিনি যখন বেঁচে ছিলেন তখন তাঁকে টানা হেছড়া করতে করতে এই ভাষার মাসে অনেকটা অসুস্থ হয়ে যেতেন। তার পরও কারও প্রতি কোন রাগ করতেন না। সবার অনুষ্ঠানে এসে কথা বলতেন। তিনি যখন কথা বলতেন তখন ডানে বামে তাকাতেন না। সত্য কথাটি স্পষ্ট করেই উচ্চারণ করতেন। আজকাল আমরা তো ডানে বামেই তাকিয়েই নিজের দলীয় সংকীর্ণতার মধ্যে থেকেই কথা বলি। দেশের বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাসদ, বাসদ, ছাত্র ইউনিয়ন, ওয়ার্কার্স পার্টি সহ  বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক প্রেমিক পাওয়া গেলেও দেশপ্রেমিক পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। দেশের জন্য ভেবে কথা বলেন এমন মানুষ পাওয়া বড় ভার। আজও আমাদের সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন করতে হয়। পানি পাওয়ার আন্দোলন করতে হয়। আর কর্তা বাবুরা তাদেরকে খুশি করার জন্য সবকিছু উজার করে দিয়ে দিচ্ছেন। ভাষার মাসে গত ১৭ ফেব্রয়ারি জন মহান ভাষা সৈনিকের সাথে কথা বলছিলাম। একজন হলেন মমতাময়ী মা রওশন আরা বাচ্চু, অন্যজন হলেন প্রখ্যাত চিকিৎসক ভাষা সৈনিক ডাঃ মির্জা মাজহারুল ইসলাম। মমতাময়ী মা রওশন আরা বাচ্চু স্মৃতিচারণ করতে করতে বলছিলেন, আমাদেরকে তো কেউ মনে রাখবে না। তাই যতদিন বেঁচে আছি সেই ঐতিহাসিক দিনের কথা নিজেই তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরছি। আজও নানাভাবে ভাষা সৈনিকরা অবহেলিত। যে ভাষার সূত্র ধরেই মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে আমাদের বিজয়ের গৌরবময় স্মৃতিকথা। সবকিছুই আমরা গুলিয়ে ফেলছি। ভাষা সৈনিক ডাঃ মির্জা মাজহারুল ইসলাম স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলছিলেন, ৯১ তে পা রেখেছি, শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর অনেক দেশের চিকিৎসকের চেয়ে একক অপারেশন আমি বেশি করেছি। ১০% মানুষের কাছ থেকে অর্থ নিলেও ৯০% মানুষের অপারেশন বিনা অর্থে করেছি।৫২ সেই উত্তাল দিনে ভাষা সৈনিক শহীদ বরকতের অপারেশন থিয়েটারেও আমি ছিলাম। তখন আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র। জীবনে অনেক কিছু দেখেছি, বাকি জীবন মানুষের সেবা করে মরতে চাই। তারা যখন কথা বলছিলেন সামনে আমি সহ যারা শুনছিলাম তাদের গৌরবময় কথায় গর্বে বুক ফুলে উঠছিল। অন্যদিকে চোখ ছলছল করছিল। সত্যিকার যারা দেশপ্রেমিক আমরা তাদেরকে মর্যাদা দিতে ভুলে গেছি। যারা চাটুকার আর তোষামোদকারী তাদেরকে নিয়েই আমাদের পথচলা। শত মানুষের ভিড়ে সত্যিকার মানুষকে হারিয়ে আমরা অমানুষের তালিকায় নিজেদেরকে নিজেরাই যুক্ত করছি। আর কারণেই দেশে বিনা বিচারে হত্যা গুম, খুন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ব্যাংক লুট সহ নানা অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। শিশু অপরাধীদের অপরাধের বর্ণনা শুনলে নিজেরাই চমকে উঠি। এখান থেকে মুক্তি পাবো কবে। দেশে আবারও অস্থিরতার আলামত শুরু হয়েছে। ২০ দলীয় জোটের শরীক দল লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদীকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করেছে। তার বিরুদ্ধে নাশকতামূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু চিনি মানুষটি নাশকতা তো দূরের কথা কারো গায়ে একটি ঢিল ছুড়তে পারে তা আমি বিশ্বাস করি না। তবে আমি ভাবছি তার গ্রেফতারে এখন যারা নিরব রয়েছেন তারা যখন গ্রেফতার হবেন তখন কারা সরব থাকবেন? আসুন দেশটাকে ভালোবাসি, দেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যার যার অবস্থান থেকে নিজেদের সর্বোচ্চ উজাড় করে গণতান্ত্রিক মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করি। 

লেখক : প্রেসিডিয়াম সদস্য, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি। 
Courtesy: 
 Sangbadik Majid
Peelkhana
Dhaka

No comments: