http://themonthlymuktidooth.blogspot.com

Sunday, February 5, 2017

Press Release from Khela Ghar






প্রেস বিজ্ঞপ্তি
পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকতার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত

কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন। বায়ান্নের চেতনায় ১৯৫২ সালের ২ মে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের সূর্য্যসন্তান শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার, সাংবাদিক-সাহিত্যিক সত্যেন সেন, রনেশ দাশগুপ্ত, জহির রায়হান, পটুয়া কামরুল হাসান, সাংবাদিক বজলুর রহমান প্রমূখ দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীদের সাহচার্যে এই সংগঠন গড়ে উঠে। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তানের অক্টোপাস থেকে বেরিয়ে প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের  জন্য শিশু-কিশোরদের মননে স্বাধীনতা যুদ্ধের অংকুর বপনের কাজটি করেছিল খেলাঘর। দেশের অধিকাংশ শিশু-কিশোর স্বাধীনতা প্রেমিক হিসাবে গড়ে উঠেছিল। 

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত চার মূলনীতি গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নির্যাসে গঠিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিশু-কিশোরদের গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর কাজ করে যাচ্ছে। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এদেশের প্রগতিশীল অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন পেশাজীবী বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের হাতেখড়ি এই খেলাঘর থেকে।

অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলাই আমাদের পবিত্র সংবিধানের নির্দেশ। কিন্তু ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি কোমলমতি শিশু-কিশোরদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে সাম্প্রদায়িক পুষ্ট পাঠ্যবই। এজন্য কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের নেতৃত্বাধীন সারাদেশে প্রায় ৬৫০ টি শাখা আসরের অসংখ্য অভিভাবক-অভিভাবিকা, কর্মী, সংগঠক ও শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন। 

ধর্মীয় দ্বিজাতিত্ত্বকে পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশ। পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ফুলে ফেঁপে বিষবৃক্ষের রূপ লাভ করেছে। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় স্বাধীনতার পর তারা একে একে প্রবেশ করেছে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতির মধ্যে। আর এখন ক্রমেই সুকৌশলে আধিপত্য বিস্তার করেছে আমাদের শিশুদের মনোজগতে। এক ভয়ানক সাম্প্রদায়িক বিষে আক্রান্ত শিক্ষাব্যবস্থা। ২০১৭ সালের প্রথম দিনেই ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে হাতে পৌঁছে যাওয়া পাঠ্যপুস্তকের ঝকঝকে মলাটের ভেতরে কি বিভস মৌলবাদী পরিকল্পনায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে সম্প্রদায় ও জাতিগত বৈষম্য ও নারী পুরুষের বৈষম্য। বই উসবআর বই উসব থাকেনি। তা পরিণত হয়েছে মৌলবাদীদের অট্টহাসিতে। সুকৌশলে পাঠ্যপুস্তকে ঢুকিয়ে দিচ্ছে জঙ্গিবাদের সুপ্ত উপাদান। আমাদের কোমলমতি শিশুদের মনন আর বোধের স্ফুরণ ঘটানোর অন্যতম হাতিয়ার এই পাঠ্যপুস্তক গুলোতে প্রতিফলিত হচ্ছে পাকিস্তানি দর্শন। এই পাঠ্যপুস্তকে যে সুপরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িকতার চাষ করা হচ্ছে, তা ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নিয়ে যাবে জঙ্গিবাদের আরও ভয়াল অন্ধকারে।

এবারের পাঠ্যপুস্তকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা বাদ দেয়া হলো, সত্যেন সেন, রনেশ দাশগুপ্তের মানব দর্শনের বোধ থেকে শিশুদের দূরে রাখার ঘড়যন্ত্র করা হলো। এস ওয়াজেদ আলীর ভ্রমণ কাহিনীকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের মিথ্যা ধূয়া তুলে বাদ দেয়া হলো। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের একটি অনন্য মাধুর্যময় কবিতা তুলে নেয়া হলো। কুসুমকুমারী দাসের কবিতার সম্পাদনায় ছুরি চালানো হলো। 
এ অবস্থায় আমাদের দাবি হলো-
১. সাম্প্রদায়িক, বৈষম্যমূলক ও ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। 
২. সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী অপশক্তি তোষণ বন্দ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপ্রসূত বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের আদর্শের ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে। 
৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন শাহ, সত্যেন সেন, রনেশ দাশগুপ্ত, এম ওয়াজেদ আলী, হুমায়ুন আজাদসহ যে লেখকদের লেখাগুলো বাদ দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমিক মনন গঠনের পথ রুদ্ধ করার জন্য সেগুলো সংযোজন করতে হবে। 
৪. শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। 
৫. জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক ও বাংলা একাডেমির বানান বিধানের মধ্যে যে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে, তা আমাদের শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে তুলছে। ফলে বাংলা বানানের বিষয়ে তারা একটি নৈরাজ্যের মধ্যে অবস্থান করছে। সৃষ্টিশীল সাহিত্য ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রে এই অসামঞ্জস্যতা দূর করে একটি স্থিতিশীল বানান কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। 
৬. দেশের শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে তার মাধ্যমে সংবিধানে উল্লেখিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী, গণমুখী ও বৈজ্ঞানিক শিক্ষার জন্যে উপযোগী পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ণ করতে হবে। 
৭. প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। 

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন এবং খেলাঘরের ৭ দফা দাবি পেশ করেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমন্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সার। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন- খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ পলাশ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুর রহমান সেলিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক সাহাবুল ইসলাম বাবু, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নছরু কামাল খান, হাফিজুর রহমান মিন্টু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা পারুল বেগম, কোহিনুর বেগম শিল্পী, ফখরুল ইসলাম, আনিসুল ইসলাম অপু এবং সীমা রানী ঘোষ। এছাড়াও সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ। এছাড়াও খেলাঘর জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন শাখা আসরের শিশু-কিশোর ভাই-বোনসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। একইদিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা এবং অঞ্চলে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। 

No comments: