স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বেগম মুজিব প্রথম সারির সংগঠক ও সাহসী নারী।
....এম এ জলিল
তিকন বুদ্ধির অধিকারী নির্লোভ নিরাহংকার সাহসী প্রজ্ঞা পান্ডিত্বের অধিকারী মহয়ষী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব রেনু। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাতা। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। জন্ম গ্রহণ করেছিলেন গোপালগঞ্জের টংগীপাড়ায় ৮ই আগস্ট ১৯৩০ খ্রিঃ। বেগম মুজিবের বয়স যখন তিন-পাঁচ বছর সেই মূহুর্তে তার মাতা-পিতা মারা যান। এই এতিম ছোট বাচ্চাকে তার নানা শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা মাকে বলেন, তোমাদের ছেলে মুজিবের কাছে আমার নাতনী রেনুকে বিবাহ দিতে চাই। শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা মা এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে ফজিলাতুন্নেছা রেনুকে শেখ মজিবুর রহমানের সাথে বিয়ে পরিয়ে দেন। এই কথাগুলো বললাম এই জন্য যে, অতি অল্প বয়সে স্বামী ভক্ত হন এবং স্বামীকে তার চলার পথে বুদ্ধি ও সাহস যুগিয়েছেন। ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ সাল পাক-ভারত মহাদেশ ভাগ হয়ে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে একটি পাকিস্তান ও একটি হিন্দুস্থান দুইটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এই পাকিস্তান জন্মের পিছনে বাঙালিদের অবদান ছিল বেশী। সেই পাকিস্তানের তথাকথিত জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে প্রথম দিকে ঢাকা সফর করেন। সেই সফরের সময় জিন্নাহ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কার্জন হলে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) দুইটি বক্তব্য দেন। প্রতিটি বক্তবেই জিন্নাহ বাঙালিদের মাতৃভাষার পরিবর্তে উর্দূ ভাষাকে বাঙালিদের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছিলো। কিন্তু দুইটি সভায়ই শেখ মুজিবুর রহমান জিন্নাহর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন তার সহযোগিদের নিয়ে। ইহার পরও পাকিস্তানে জিন্নাহর বক্তরা থেমে থাকে নেই। তারা বাংলা ভাষাকে মেনে নিতে পারে নাই এবং বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে কাজ করতে ছিলেন। সেই মূহুর্তে বাঙালিদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে ১১ই মার্চ ১৯৪৮ সাল শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিক বাহাউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে সচিবালয় ঘেরাও করেন। ঐ ঘেরাউর দিন শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দিন চৌধুরীসহ প্রায় দেড়শতাধিক আন্দোলনকারী ছাত্র যুবকে গ্রেফতার করেন। পুলিশের লাঠি পিটায় বাহাউদ্দিন চৌধুরী হাত ভেঙ্গে যায়। বন্দী অবস্থায় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব শেখ রহমানের কাছে চিঠি লিখেন। বেগম মুজিব সেই চিঠিতে লিখেন আপনি আপনার রাজনীতির কাজ চালিয়ে যান। আমাদের জন্য কোন চিন্তা করবেন না। আমরা ভালো আছি। আমার শ^শুর বাবা (শেখ লুৎফর রহমান) আমাদের খোঁজখবর রাখছেন। কোন অসুবিধা নেই। ইহাতেই প্রমাণ হয় তিনি কত সাহসী নারী। পরবর্তীতে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানের শাষন শোষণ নির্যাতন অর্থনৈতিক বৈষ্যম্যের কারণে ৫ই ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬সালে পাকিস্তানের লাহোরে বাঙালিদের মুক্তির সনদ ৬দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই ৬দফা উত্থাপনের পর পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব শাহী বার বার বা দুইদনি চারদিন পরপরই শেখ মুজিবুর রহমান কে গ্রেফতার করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই বেগম মুজিবকে শেখ মুজিবের আদর্শ থেকে বিচ্যুতি করতে পারে নাই। পাকিস্তান সরকারের কোন অসৎ শক্তি। ৬দফা ঘোষণার পর আতাউর রহমান, এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম ও মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাদী আওয়ামীলীগ থেকে বের হয়ে যান। এই ৬দফা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গ্রহণ করার জন্য বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন এবং আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গ্রহণ করিয়াছেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৬দফাটি উত্থাপন করেন তখনকার ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহাউদ্দিন চৌধুরী। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে ১নং আসামী ও লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে ২য় আসামী করে আগরতলা অভিযুক্ত মামলা হয়। এই মামলার যখন ঢাকা সেনানিবাসে বিচার চলছিলো, তখন ১৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ সালে ঢাকা সেনানিবাসে অভিযুক্ত দুইজন আসামীকে গুলি করে। মিথ্যা কথা বলে যে তারা পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো। ইহাতে সার্জেন্ট জহুরুল হক মুত্যুবরণ করেন ও সার্জেন্ট ফজলুল হক চিকিৎসায় বেঁচে যান। সেই মূহুর্তে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর মোনেম ও তার পান্ডারা প্রচার করতে ছিলো শেখ মুজিবকে ও লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে ফাঁসি দেওয়া হবে। কেউ রক্ষা করতে পারবে না। এই সব প্রচারে বেগম মুজিব বিচলিত হন নাই। তিনি সাহসের সাথে প্রজ্ঞা পান্ডিত্য বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বাঙালিদের শ্রমিক কৃষক ছাত্র জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। তাদেরকে টাকা পয়সা দিয়েও উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং ৬৯এ ছাত্র জনতা আন্দোলনের মুখে আইউব শাহী শেখ মুজিবর রহমানকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে আইউব শাহীর সাথে সংলাপ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বেগম মুজিবের সাহস ও বুদ্ধিমত্তার কাছে আইউব শাহী পরাজিত হয়েছেন। বেগম মুজিব বলেছিলেন প্যারোলের মাধ্যমে কোন সংলাপ হবে। একমাত্র মুক্তির মাধ্যমেই সংলাপ হবে। তার ফলস্বরূফ ২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে আউয়ুব শাহী ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তার সাথে আগরতলা অভিযুক্ত মামলার সকল আসামীরাই মুক্তিলাভ করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ সাল সোহারাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি জননেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু খেতাবে ভুষিত করেন। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হয়। সামরিক শাসক ইয়াহিয়া তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। পাকিস্তানের নির্বাচনে পূব পাকিস্তান আওয়ামীলীগ জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচনে জয়যুক্ত হন। এই বিজয়ী দলের নেতা হলেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব রেনুর স্বামী বাংলাদেশের অবিসাংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু পাকিস্তানী সামরিক শাসক ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর কাছে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতা না দিয়ে ২৫ মার্চ ১৯৭১ বাঙালি নিরস্ত্র জনগণের উপর সশস্ত্র আক্রমন চালায় এবং বাঙালিদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে নেন। এবং রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিয়ে বিচার আরম্ভ করেন। সেই সময়েও বেগম মুজিব এর কাছে বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসতো মুজিবকে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করতে বলো নইলে তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে। ইহাতেও বেগম মুজিব সাহসের সাথে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে প্রতিবাদ করেছে এবং তাদের কথায় কান দেন নাই। ইহাতেই বুঝা যায় বেগম মুজিবের কতবড় সাহস এবং তিনি যে একজন তিকনো বুদ্ধির অধিকারী মহসী নারী তার প্রমাণ হয়। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার আগে ৭ই মার্চ ১৯৭১সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় ১০ লক্ষ লোকের সামনে বক্তৃতা দেওয়া জন্য সেই সময় ৩২ নম্বরের বাসায় দুপুর বেলা পায়চারি করতে ছিলো এবং চিন্তিত ছিলেন। তখন বেগম মুজিব বলেছেন, আপনি যেভাবে বাঙালিদের ভালোবাসেন এবং বাঙালিরাও আপনাকে ভালোবাসে। সেই ভালবাসারই বক্তব্য দিতে হবে। কেউর কথায় কোন কান দিবেন না। বেগম মুজিব যে একজন বুদ্ধিমতি নারী তার প্রমাণও তিনি রেখেছেন। বেগম মুজিবের কাছে কো হিসংসা বিদ্বেশ ছিলো না। তিনি কে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্ঠান উপজাতী বা মুসলমান তার কাছে সবাই সমান অধিকার পেয়েছেন, ভালোবাসা পেয়েছেন। বাসায় মাছ-ভাত খাওয়াইয়েছেন। আমরা বাঙালিরা স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য বেগম মুজিবের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। এই মহিয়সী নারীকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে তার স্বামী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার দেবর শেখ নাছের, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল এবং দুইপুত্র বধু সহ ৩২ নাম্বারের বাড়ীতে ও মিন্টু রোডে তার ননদ জামাই বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী পরিষদের অন্যতম সদস্য আব্দুর রব ছেরনিয়াবাত সহ তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য এবং গুলশানে তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি ও শেখ মণির স্ত্রী আরজু মণিকে মোস্তাক জিয়া গংরা নির্মমভাবে হত্যা করে। আমরা আজকে মরনোত্তর মোস্তাক জিয়ার বিচারের দাবী করছি। আজ ৮ আগস্ট ২০১৯ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। আমরা তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। লেখক সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ।
....এম এ জলিল
তিকন বুদ্ধির অধিকারী নির্লোভ নিরাহংকার সাহসী প্রজ্ঞা পান্ডিত্বের অধিকারী মহয়ষী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব রেনু। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাতা। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। জন্ম গ্রহণ করেছিলেন গোপালগঞ্জের টংগীপাড়ায় ৮ই আগস্ট ১৯৩০ খ্রিঃ। বেগম মুজিবের বয়স যখন তিন-পাঁচ বছর সেই মূহুর্তে তার মাতা-পিতা মারা যান। এই এতিম ছোট বাচ্চাকে তার নানা শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা মাকে বলেন, তোমাদের ছেলে মুজিবের কাছে আমার নাতনী রেনুকে বিবাহ দিতে চাই। শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা মা এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে ফজিলাতুন্নেছা রেনুকে শেখ মজিবুর রহমানের সাথে বিয়ে পরিয়ে দেন। এই কথাগুলো বললাম এই জন্য যে, অতি অল্প বয়সে স্বামী ভক্ত হন এবং স্বামীকে তার চলার পথে বুদ্ধি ও সাহস যুগিয়েছেন। ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ সাল পাক-ভারত মহাদেশ ভাগ হয়ে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে একটি পাকিস্তান ও একটি হিন্দুস্থান দুইটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এই পাকিস্তান জন্মের পিছনে বাঙালিদের অবদান ছিল বেশী। সেই পাকিস্তানের তথাকথিত জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে প্রথম দিকে ঢাকা সফর করেন। সেই সফরের সময় জিন্নাহ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কার্জন হলে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) দুইটি বক্তব্য দেন। প্রতিটি বক্তবেই জিন্নাহ বাঙালিদের মাতৃভাষার পরিবর্তে উর্দূ ভাষাকে বাঙালিদের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছিলো। কিন্তু দুইটি সভায়ই শেখ মুজিবুর রহমান জিন্নাহর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন তার সহযোগিদের নিয়ে। ইহার পরও পাকিস্তানে জিন্নাহর বক্তরা থেমে থাকে নেই। তারা বাংলা ভাষাকে মেনে নিতে পারে নাই এবং বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে কাজ করতে ছিলেন। সেই মূহুর্তে বাঙালিদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে ১১ই মার্চ ১৯৪৮ সাল শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিক বাহাউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে সচিবালয় ঘেরাও করেন। ঐ ঘেরাউর দিন শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দিন চৌধুরীসহ প্রায় দেড়শতাধিক আন্দোলনকারী ছাত্র যুবকে গ্রেফতার করেন। পুলিশের লাঠি পিটায় বাহাউদ্দিন চৌধুরী হাত ভেঙ্গে যায়। বন্দী অবস্থায় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব শেখ রহমানের কাছে চিঠি লিখেন। বেগম মুজিব সেই চিঠিতে লিখেন আপনি আপনার রাজনীতির কাজ চালিয়ে যান। আমাদের জন্য কোন চিন্তা করবেন না। আমরা ভালো আছি। আমার শ^শুর বাবা (শেখ লুৎফর রহমান) আমাদের খোঁজখবর রাখছেন। কোন অসুবিধা নেই। ইহাতেই প্রমাণ হয় তিনি কত সাহসী নারী। পরবর্তীতে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানের শাষন শোষণ নির্যাতন অর্থনৈতিক বৈষ্যম্যের কারণে ৫ই ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬সালে পাকিস্তানের লাহোরে বাঙালিদের মুক্তির সনদ ৬দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই ৬দফা উত্থাপনের পর পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব শাহী বার বার বা দুইদনি চারদিন পরপরই শেখ মুজিবুর রহমান কে গ্রেফতার করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই বেগম মুজিবকে শেখ মুজিবের আদর্শ থেকে বিচ্যুতি করতে পারে নাই। পাকিস্তান সরকারের কোন অসৎ শক্তি। ৬দফা ঘোষণার পর আতাউর রহমান, এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম ও মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাদী আওয়ামীলীগ থেকে বের হয়ে যান। এই ৬দফা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গ্রহণ করার জন্য বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন এবং আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গ্রহণ করিয়াছেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৬দফাটি উত্থাপন করেন তখনকার ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহাউদ্দিন চৌধুরী। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে ১নং আসামী ও লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে ২য় আসামী করে আগরতলা অভিযুক্ত মামলা হয়। এই মামলার যখন ঢাকা সেনানিবাসে বিচার চলছিলো, তখন ১৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ সালে ঢাকা সেনানিবাসে অভিযুক্ত দুইজন আসামীকে গুলি করে। মিথ্যা কথা বলে যে তারা পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো। ইহাতে সার্জেন্ট জহুরুল হক মুত্যুবরণ করেন ও সার্জেন্ট ফজলুল হক চিকিৎসায় বেঁচে যান। সেই মূহুর্তে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর মোনেম ও তার পান্ডারা প্রচার করতে ছিলো শেখ মুজিবকে ও লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে ফাঁসি দেওয়া হবে। কেউ রক্ষা করতে পারবে না। এই সব প্রচারে বেগম মুজিব বিচলিত হন নাই। তিনি সাহসের সাথে প্রজ্ঞা পান্ডিত্য বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বাঙালিদের শ্রমিক কৃষক ছাত্র জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। তাদেরকে টাকা পয়সা দিয়েও উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং ৬৯এ ছাত্র জনতা আন্দোলনের মুখে আইউব শাহী শেখ মুজিবর রহমানকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে আইউব শাহীর সাথে সংলাপ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বেগম মুজিবের সাহস ও বুদ্ধিমত্তার কাছে আইউব শাহী পরাজিত হয়েছেন। বেগম মুজিব বলেছিলেন প্যারোলের মাধ্যমে কোন সংলাপ হবে। একমাত্র মুক্তির মাধ্যমেই সংলাপ হবে। তার ফলস্বরূফ ২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে আউয়ুব শাহী ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তার সাথে আগরতলা অভিযুক্ত মামলার সকল আসামীরাই মুক্তিলাভ করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ সাল সোহারাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি জননেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু খেতাবে ভুষিত করেন। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হয়। সামরিক শাসক ইয়াহিয়া তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। পাকিস্তানের নির্বাচনে পূব পাকিস্তান আওয়ামীলীগ জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচনে জয়যুক্ত হন। এই বিজয়ী দলের নেতা হলেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব রেনুর স্বামী বাংলাদেশের অবিসাংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু পাকিস্তানী সামরিক শাসক ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর কাছে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতা না দিয়ে ২৫ মার্চ ১৯৭১ বাঙালি নিরস্ত্র জনগণের উপর সশস্ত্র আক্রমন চালায় এবং বাঙালিদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে নেন। এবং রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিয়ে বিচার আরম্ভ করেন। সেই সময়েও বেগম মুজিব এর কাছে বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসতো মুজিবকে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করতে বলো নইলে তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে। ইহাতেও বেগম মুজিব সাহসের সাথে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে প্রতিবাদ করেছে এবং তাদের কথায় কান দেন নাই। ইহাতেই বুঝা যায় বেগম মুজিবের কতবড় সাহস এবং তিনি যে একজন তিকনো বুদ্ধির অধিকারী মহসী নারী তার প্রমাণ হয়। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার আগে ৭ই মার্চ ১৯৭১সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় ১০ লক্ষ লোকের সামনে বক্তৃতা দেওয়া জন্য সেই সময় ৩২ নম্বরের বাসায় দুপুর বেলা পায়চারি করতে ছিলো এবং চিন্তিত ছিলেন। তখন বেগম মুজিব বলেছেন, আপনি যেভাবে বাঙালিদের ভালোবাসেন এবং বাঙালিরাও আপনাকে ভালোবাসে। সেই ভালবাসারই বক্তব্য দিতে হবে। কেউর কথায় কোন কান দিবেন না। বেগম মুজিব যে একজন বুদ্ধিমতি নারী তার প্রমাণও তিনি রেখেছেন। বেগম মুজিবের কাছে কো হিসংসা বিদ্বেশ ছিলো না। তিনি কে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্ঠান উপজাতী বা মুসলমান তার কাছে সবাই সমান অধিকার পেয়েছেন, ভালোবাসা পেয়েছেন। বাসায় মাছ-ভাত খাওয়াইয়েছেন। আমরা বাঙালিরা স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য বেগম মুজিবের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। এই মহিয়সী নারীকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে তার স্বামী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার দেবর শেখ নাছের, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল এবং দুইপুত্র বধু সহ ৩২ নাম্বারের বাড়ীতে ও মিন্টু রোডে তার ননদ জামাই বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী পরিষদের অন্যতম সদস্য আব্দুর রব ছেরনিয়াবাত সহ তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য এবং গুলশানে তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি ও শেখ মণির স্ত্রী আরজু মণিকে মোস্তাক জিয়া গংরা নির্মমভাবে হত্যা করে। আমরা আজকে মরনোত্তর মোস্তাক জিয়ার বিচারের দাবী করছি। আজ ৮ আগস্ট ২০১৯ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। আমরা তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। লেখক সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ।
No comments:
Post a Comment