http://themonthlymuktidooth.blogspot.com

Monday, November 25, 2019

পাহাড়ে বন-জঙ্গলে অস্ত্রের ছড়াছড়ি

২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ইং স্বাক্ষরিত পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২২ বছর পরও পাহাড়ে বনজঙ্গলে চলছে বন্দুকযুদ্ধ, অস্ত্রের মহরা ও একে ৪৭সহ অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রদর্শনী। প্রায় ২ যুগ পরও শান্তির শ্বেত কপোতটির দেখা মেলেনি, হিংসার অনলে পুড়ছে তিন পার্বত্য জেলার বাঙালিদের মানবাধিকার। পার্বত্যবাসী সাধারণ উপজাতি ও বাঙালিরা হচ্ছে উপেক্ষিত। চুক্তির একপক্ষ তথা সন্তু লারমা পক্ষই ভোগ করছে শান্তিচুক্তির শতভাগ হালুয়া-রুটি, সরকার পক্ষ দেশী-বিদেশী চাপের মুখে শতভাগ ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েও যেন স্মায়ুবিক আতঙ্কে ভুগছে; আবার না জানি সন্তুুলারমা কোন দাবীটি করে বসে? একপক্ষ যতই পাচ্ছে ততই পাবার ক্ষুধা বাড়ছে। সরকার পক্ষ দিসেহারা আত্মসমর্পনকারীদের মান ভাঙ্গাতে। বিশ্বের কোথাও কোন আত্মসমর্পনকারী রাষ্ট্রদ্রোহীদেরকে যেসব সুবিধা না দেয়া হয়, তারচেয়ে হাজারগুনবেশী স্বাধীনতা দেয়া হচ্ছে সন্তুবাবুদেরকে। অথচ তার পরও থামছে না রণহুঙ্কার, হুমকি-ধামকি, খুন, চাঁদাবাজী, বন্দুকযুদ্ধ, মুক্তিপন, রাষ্ট্রদ্রোহী জুমল্যান্ড অপপ্রচার। এইতো আমাদের শান্তিচুক্তি, এইতো আমার বাংলাদেশ, এটাইতো বর্তমান পাহাড়ের সর্বশেষ চিত্র।

পার্বত্য শান্তিচুক্তির মাধ্যমে সন্তুলারমা নিজের এসএমজি সহ মোট ৮৭২টি অস্ত্রজমা দিয়েছিলেন (পুরনো, জংধরা, বেয়নেটসহ)। ভাল এবং ভারী অস্ত্রগুলো জমা না দিয়ে গোপন স্থানে তা সংরক্ষিত করা হয়েছে ভবিষ্যতের জন্য। জেএসএস এবং ইউপিডিএফ উভয় গ্রুপই ক্যাডার বাহিনী তৈরী করে পাহাড়ের দুর্গম এলাকাগুলো চাঁদাবাজির সুবিধার্থে ভাগ করে নিয়েছে। পাহাড়ের ১৬ লাখ মানুষ তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। মাঝে মাঝে চাঁদার টাকা বাটোয়ারা নিয়েও চলে খুনাখুনি- বন্দুকযুদ্ধ। চুক্তির শর্তানুযায়ী অনেকগুলো নিরাপত্তা ক্যাম্প প্রত্যাহারের কারনে সেগুলো চলে গেছে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের দখলে। অল্পকিছু নিরাপত্তা ক্যাম্প সচল আছে যেগুলো মাঝে মাঝে বেসামরিক পুলিশ, আনসার, বিজিবির আমন্ত্রনে পেট্রোল ডিউটিতে গিয়ে জনগণের জানমাল সম্পদ রক্ষা করছে। সেখানেও যেন সন্তু লারমার অস্বস্তি, বলা হচ্ছে শান্তিচুক্তির লংঘন। এই অল্পকিছু সেনাবাহিনীর কারণে বর্তমানে পাহাড়ে বন্দুকযুদ্ধ সীমিত, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষন-ডাকাতি ইত্যাদি ব্যহত হচ্ছে। তাতেই যেন বাবুদের গোস্বা-তাইতো বিনা যুদ্ধ ঘোষণা, অতর্কিতে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে সেনা টহলগাড়ীতে এম্বুশ করা হচ্ছে, অকালে শহীদ হচ্ছে আমাদের বীর সৈনিকেরা। কিন্তু, এই শান্তিচুক্তির জন্যই কি আমরা ৩০ লাখ বাঙালি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছিলাম?


পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিরা মানবাধিকার বঞ্চিত, ঘরে তাদের খুধারজ্বালা, বাইরে প্রাণের ভয়। জুম্ম জাতির মুক্তিযুদ্ধের জন্য বাঙালিরা চাঁদাবাজী, গুম, হত্যা, অপহরন, অগ্নিসংযোগ এবং মিথ্যা মামলার স্বীকার হচ্ছে। সরকার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে আজো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও স্বাধীন-সার্বভৌম নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নাই। কেননা সেসব করতে গেলেই উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের ব্লাকমেইলের ফাঁদে পড়তে হয়। পাহাড়ী নারীদেরকে ব্যবহার করাতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক অভিযান, অপারেশন করা যায় না। ধর্ষনের সাজানো ঘটনায়ও বিব্রত হতে হয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার ভিডিপির সদস্যদেরকে। রাঙামাটির সাজেক, কুতুবছড়ি, নানিয়ারচর, দীঘিনালা, পানছড়ি, থানছি, রুমা, নাইক্ষ্যাংছড়ি, ফাঁসিয়াখালী, কাউখালী, বাঘাইছড়ি, খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর, লারমা স্কোয়ার, বিভিন্ন বৌদ্ধমন্দির, বনভান্তের আশ্রম, পাকুয়াখালী, মানিকছড়ি, মহালছড়ি, রামগড় ইত্যাদিতে বেশকিছু দুর্গম এলাকায় সরকারের ন্যুনতম নজরদারী ও নিয়ন্ত্রন আজো প্রতিষ্ঠা হয় নাই। ঐসব স্থানে প্রবেশাধিকার খুবই কঠিন ও উপজাতিয় নেতাদের নিয়ন্ত্রিত। সেখানে বাঙালিরা প্রবেশ করতে পারে না। এমনকি উপজাতিয় সন্ত্রাসীদের স্বজনছাড়া নিরিহ উপজাতি জনগণও প্রবেশ করতে পারে না। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের অভয়ারন্য হিসেবে পরিচিত ঐসব এলাকার বিষয়ে জেএসএস, ইউপিডিএফ নেতারা শান্তিচুক্তির পর থেকে আজো নিরব ভূমিকায় কেন? জাতি কি সেই তথ্য পাবার অধিকার রাখে না?

দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে, বাংলাদেশের অখন্ডতা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সংবিধান রক্ষার অঙ্গীকার নিয়েই স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২/১২/১৯৯৭ইং এর শান্তিচুক্তি। অথচ-

১। পার্বত্য বাঙালীরা কোন চাকুরী কোটা পায় না। কিন্তু ১৯৮৫ সাল থেকেই অদ্যাবধি জাতীয় ভিত্তিক স্তরে ৫% হারে উপজাতি কোটা বরাদ্দ আছে। ৫০০০ জনের বেশি উপজাতি নরনারী এই সুবিধা পেয়েছেন, যার অধিকাংশই সন্তু লারমার আত্মীয়/চাকমা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির।

২। উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বড় বড় নামীদামী কলেজ ও ভার্সিটিতে প্রতি বছরই ২১৭টি করে আসন সংরক্ষিত থাকে উপজাতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। পার্বত্যবাসী বাঙালিরা খুবই অল্প সংখ্যক সিট পেয়েও নিরব আছেন। উপেন্দ্র লাল চাকমারা এতকিছু পেয়েও সরব নিরন্ন অসহায় বাঙালিরা গুচ্ছ গ্রামের ঘানি টানতে টানতে ক্লান্ত/অবসন্ন।

৩। সরকারী ব্যাংক থেকে উপজাতিরা ৫% হারে স্বল্পসুদে ঋন পেলেও বাঙালিরা পায় না। উপজাতি নেতারা বিভিন্ন অজুহাতে ঋণ নিয়েও তা পরিশোধ করে না এমনকি সুদাসলে তা মওকুফ করিয়ে নেয় বিভিন্ন কৌশলে।

৪। পার্বত্যবাসী বাঙালিরা সরকারকে আয়কর দিলেও উপজাতিরা কোন আয়কর দেয় না। ৩০% পাহাড়ী ভাতা নিচ্ছে স্থানীয় ভাবে বসবাসকারী উপজাতি জনবল।

৫। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান সকল সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্বশাসিত অফিস আদালত প্রতিষ্ঠানে শতকরা ৮০ ভাগ চাকুরী পাচ্ছে উপজাতিরা। বাঙালিরা মেধা এবং প্রতিযোগিতায় অল্পকিছু মাত্র চাকুরী পেয়ে থাকে।


৬। পুলিশ বিভাগে এ পর্যন্ত ৭০৫ জনের বেশি আত্মসমর্পনকারী শান্তিবাহিনীর সদস্যকে এসআই, কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পার্বত্য বাঙালিদের জন্য কোন কোটা নাই এমনকি পুলিশ বিভাগের বড় বড় অফিসার পদেও উপজাতীয়দের ছড়াছড়ি (এনবিকে ত্রিপুরা, পুলিশের ডিআইজি, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান)।

৭। শান্তিচুক্তির মাধ্যমে সব উপজাতীয়কে ভোটার করা যাবে। ভারত কিংবা বাংলাদেশী উপজাতিয় বলে যাচাই করা যাবে না। কিন্তু শুধুমাত্র স্থায়ী ঠিকানা সম্বলিত বাঙালিকে ভোটার করা যাবে। তাদের সন্তানদের ভোটার করা যাবে না। যা রিতিমত সংবিধান লঙ্ঘন।

৮। শান্তিচুক্তির শর্তানুযায়ী তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হবেন উপজাতিয়। জেলা পরিষদের ৩৪টি আসনের মধ্যে উপজাতীয়দের জন্য রাঙামাটিতে ২৩টি, বান্দরবানে ২২টি এবং খাগড়াছড়িতে ২৪টি আসন বরাদ্দ করা আছে। পার্বত্যবাসী বাঙালিদের জন্য রাঙামাটিতে ১১টি, বান্দরবানে ১২টি এবং খাগড়াছড়িতে ১০টি মাত্র আসন বরাদ্দ। এত বড় বৈসম্যের পরেও সন্তুবাবুদের হাজারো অভিযোগ।

৯। পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান পদে শ্রী সন্তুলারমা (১২ বছরেরও বেশি বিনা ভোটে ক্ষমতা ভোগ করছেন) এবং ২২জন সদস্যের মধ্যে ১৫ জন উপজাতিয় এবং ৭ জন বাঙালি। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংখ্যার অর্ধেক বাঙালি জনগোষ্টি।

১০। সরকারি প্রকল্প ব্যয়/টেন্ডার ২ লাখ টাকা পর্যন্ত উপজাতীয় ঠিকাদারদের জন্য অগ্রাধিকার, যা’ বাঙালিরা পায় না।

১১। পাহাড়ে ইউএনডিপিসহ দেশী-বিদেশী সবগুলো এনজিও উপজাতীয়দের জন্য অবারিত অথচ বাঙালিদের কোন এনজিও অর্থায়ন করে না। টুকিটাকি অর্থ পেলেও সন্তুলারমার চোখ রাঙানির কারণে বাঙালিদের পুনর্বাসনের প্রকল্প কাটছাট করে দেয়া হয়। নিজেদেরকে আদিবাসী বলে জাহির করে দেশী-বিদেশীদের করুনা ভিক্ষা করা এবং পাহাড়ে বসবাসকারী অনাহারে-অর্ধাহারে জর্জরিত বাঙালি জনগোষ্ঠিকে অনুপ্রবেশকারী, রিফুজি, সেটেলার, মোগদা বাঙাল বলে গালাগাল করাই হলো জনসংহতি সমিতি, ইউপিডিএফ, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, হীল ওম্যান ফেডারেশন, গুন্ডুস, বোরকাপার্টি, লাগেজ পার্টি নামধারী উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের প্রধান কাজ।

এমন বাংলাদেশতো আমরা চাই নাই।

লেখক: সমঅধিকার ছাত্র আন্দোলন, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক এবং কুমিল্লা বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি প্রকৌশল বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসিন্দা, পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২২ বছর উপলক্ষ্যে উপরোক্ত প্রবন্ধটি জাতির উদ্দেশ্যে পেশ করা হয়েছে।




No comments: