প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক/প্রকাশক/মুদ্রাকর : ইশফাকুল মজিদ সম্পাদনা নির্বাহী /প্রকাশক : মামুনুল মজিদ lপ্রতিষ্ঠা:১৯৯৩(মার্চ),ডিএ:৬১২৫ lসম্পাদনা ঠিকানা : ৩৮ এনায়েতগঞ্জ আবু আর্ট প্রেস পিলখানা ১ নং গেট,লালবাগ, ঢাকা ] lপ্রেস : ইস্টার্ন কমেরসিএল সার্ভিসেস , ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি - ৮/৪-এ তোপখানা ঢাকাl##সম্পাদনা নির্বাহী সাবেক সংবাদ সংস্থা ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সী বিশেষসংবাদদাতা,দৈনিক দেশ বাংলা
http://themonthlymuktidooth.blogspot.com
Tuesday, September 13, 2011
Kader Innocent:Investigation at the ending...
তিন মামলার কোনোটিতেই জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। পায়ে কোপ দেওয়ার সময় ওসি নেশাগ্রস্ত ছিলেন!
কাদের নির্দোষ, তদন্ত শেষ পর্যায়ে
কাদের এখনো আতঙ্ক বোধ করেন। মনে ভয় কাজ করে তাঁর। ছবিটি গতকাল রাজধানীর মহাখালী এলাকায় তাঁর বোনের বাসা থেকে তোলা
পুলিশের নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদের নির্দোষ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের সত্যতা পায়নি।
তদন্ত তদারক কর্মকর্তা, ডিবির উপকমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কাদেরের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি, অবৈধ অস্ত্র রাখা ও গাড়ি ছিনতাইয়ের অভিযোগে তিনটি মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন পর্যন্ত তাঁর অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি।গত ১৫ জুলাই গভীর রাতে খিলগাঁও থানার পুলিশ রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে কাদেরকে বিনা কারণে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতন করে। তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মিথ্যা মামলাও করা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত পুলিশের তদন্ত কমিটিও কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায়নি বলে জানা গেছে।
ডিবি পুলিশ ও তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য জানান, খিলগাঁও থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) তিন পুলিশ কর্মকর্তা কাদেরকে নির্যাতনের জন্য দায়ী। এঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘খিলগাঁও থানার ওসি আমাকে অকারণে গ্রেপ্তারের পর তাঁর কক্ষে নিয়ে টেবিলে থাকা একটি চাপাতি হাতে নিয়ে বলেন, “দেখি, এটার ধার কেমন!” এরপর তিনি ওই চাপাতি দিয়ে আমার বাঁ পায়ে কোপ বসিয়ে দেন। এ সময় পা দিয়ে রক্ত বেরিয়ে মেঝে ভিজে যায়। কিছুক্ষণ পর ওসির নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা আমাকে পাশে একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান।’
চাপাতি দিয়ে আঘাত করার কারণ জানতে চাইলে খিলগাঁও থানার ওই সময়ের ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি কাদেরকে কোপ দিইনি। গণপিটুনির সময় সে আহত হতে পারে।’
খিলগাঁও থানার পুলিশ সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ের সামনে থেকে কাদেরকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু এই জায়গাটি রমনা থানার অধীনে। এক থানার পুলিশ অন্য এলাকায় গিয়ে কাউকে গ্রেপ্তার করলে সংশ্লিষ্ট থানাকে জানাতে হয়। এ নিয়ম মানা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার কৃষ্ণপদ রায় প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার রাতেও জানানো হয়নি, পরেও জানানো হয়নি।গণপিটুনির কথা বলা হলেও গভীর রাতে দুদক কার্যালয়ের সামনে এত মানুষ এল কী করে, জানতে চাইলে সাবেক ওসি হেলাল বলেন, তা ৎ ক্ষণিক মামলা হওয়ায় তিনি এ বিষয়টি তদন্ত করার সুযোগ পাননি।
তবে কাদেরকে নির্যাতনের সময় থানায় উপস্থিত একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ওসি হেলাল নেশাগ্রস্ত ছিলেন। অসংলগ্ন কথা বলতে বলতে তিনি কাদেরের পায়ে কোপ দেন।কাদেরের মা মনোয়ারা বেগম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ওসি হেলাল আমাকে লোভ দেখান। তিনি বলেন, “আপনার ছেলের চিকি ৎ সার জন্য যা লাগে, তা-ই করা হবে। দরকার হলে দেশের বাইরে পাঠিয়ে চিকি ৎ সার ব্যবস্থা করা হবে। আপনি থানায় আসেন, যা চান তা-ই দেওয়া হবে।” আবার একই সঙ্গে ওসি হুমকিও দেন। বলেন, “এ নিয়ে আন্দোলন করলে ক্ষতি হবে।”’
কাদের যেভাবে গ্রেপ্তার হন: তদন্ত কর্মকর্তা ও কাদেরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবদুল কাদের ইস্কাটন গার্ডেন রোডের হলি ফ্যামিলি কোয়ার্টারে খালার বাসা থেকে হেঁটে হলে ফিরছিলেন। রাত দেড়টার দিকে সেগুনবাগিচার দুদক কার্যালয়ের সামনে সাদা পোশাকের তিন পুলিশ সদস্য পেছন থেকে দৌড়ে এসে পিঠে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। কাদের পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ফজলুল হক হলে যাচ্ছেন। পরিচয় পাওয়ার পর তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই ছিনতাই-ডাকাতি করে। এ কথা বলতে বলতে তাঁরা কাদেরকে পেটাতে থাকেন। এরপর সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে তুলে খিলগাঁও থানায় নিয়ে যায়। এর আগে আরেক যুবককে পুলিশ গাড়িতে তোলে। সারা রাত তাঁকে থানাহাজতে রাখা হয়। পরদিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ওসি হেলাল উদ্দিন কাদেরকে তাঁর কক্ষে ডেকে নেন। এরপর ওসি নিজে মারধর করেন।তদন্তে যা পাওয়া গেছে: তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ডাকাতি, অস্ত্র রাখা ও গাড়ি ছিনতাইয়ের মামলায় কাদেরের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। কাদেরের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া মামুন গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, সেদিন পুলিশকে বোমা ছুড়ে পালিয়েছে সবুজ। গ্রেপ্তারের পর ভয়ে সেদিন সে কাদেরকে তার সহযোগী বলেছিল। সে কাদেরকে চিনত না। গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, মামুন সবুজ সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছিল, তার সঙ্গে কাদেরের চেহারায় মিল নেই। গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা মামুনের মুঠোফোনের তালিকা পরীক্ষা করে দেখেন, মামুন ১৪ জুলাই মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিল। তবে কাদেরের ওই এলাকায় থাকার প্রমাণ মেলেনি।
তদন্ত কমিটি: মামলা তদন্তের পাশাপাশি তদন্ত কমিটির সদস্যরাও এর সত্যতা পাননি বলে জানা গেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তকাজ শেষ হয়েছে। কমিটির সদস্যদের নিয়ে দু-তিনটি সভায় বসে প্রতিবেদন নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
জলিল বলেন, ঘটনাস্থল খিলগাঁও, সেগুনবাগিচার দুদক কার্যালয় এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তি, আহত ছাত্র কাদের, তাঁর মা-বোন, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা, চিকি ৎ সক ও গ্রেপ্তার হওয়া ছিনতাইকারীর বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।গত সোমবার কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছিনতাই-ডাকাতি তো দূরের কথা, জীবনে আমি সিগারেট পর্যন্ত মুখে নিইনি। আমি কারও ক্ষতি করিনি যে আমার কেউ ক্ষতি করতে পারে। পুলিশ আমার বিরুদ্ধে তিন-তিনটি মামলা কেন দিল জানি না। পুলিশ আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে, কোনোভাবেই তা প্রমাণ করতে পারবে না।’গ্রেপ্তারের পর মামলা: ১৬ জুলাই (১৫ তারিখ দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায়) কাদেরের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়। থানার ত ৎ কালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আলম বাদশা এ মামলার বাদী। ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুর থানার একটি পুরোনো গাড়ি ছিনতাইয়ের মামলায় কাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই আলম বাদশা বলেন, সেদিন ছিনতাইকারী মামুনকে একটি গাড়িসহ আটক করলে ঘটনাস্থলে কাদেরকেও পাওয়া যায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মামুন কাদেরকে দেখিয়ে বলেছে, ‘স্যার, ও আমাদের গাড়িতে ছিল।’ মামুনের জবানবন্দির ভিত্তিতে কাদেরের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়।
কাদেরের মুক্তি: ২৬ জুলাই কাদেরের মুক্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন হলে বিষয়টি জানা যায়। ২৮ জুলাই হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কাদেরের নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে আইনসচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন। তদন্তকালে খিলগাঁও থানার ওসি হেলাল, এসআই আলম বাদশা ও এএসআই শহিদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল জলিলকে প্রধান করে চার সদস্যের এবং আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আশীষ রঞ্জনকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আট সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। গত ৩ আগস্ট কাদের তিনটি মামলায় জামিন পান।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment